• July 28, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

শতভাগ নায়িকা ও অভিনেত্রী শাবনূর

শাবনূর দেশীয় চলচ্চিত্রের অবধারিত একটি নাম যে নামে একটি দেশের চলচ্চিত্র সমৃদ্ধ হয়েছে। তারকা হয়ে ওঠার মধ্যে খুব বেশি কৃতিত্ব আজকের দিনের প্রেক্ষাপটে নেই। তারকার বাইরে নিজের আইডেনটিটি মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসনে উন্নীত করাই একজন অভিনয়শিল্পীর কাজ। একজন শাবনূর সেই জায়গায় আদর্শে পরিণত হয়েছে।

শাবনূর শতভাগ নায়িকা ও অভিনেত্রী। নায়িকা হতে পারাটাও সহজ না আবার অভিনেত্রী হয়ে ওঠাও সহজ না। অভিনেত্রীর পূর্বধাপ নায়িকা হয়ে ওঠা এটুকু বলা যায়। শাবনূর নায়িকা হিসেবে চলচ্চিত্রে শতভাগ নিজেকে প্রমাণ করার পর অভিনেত্রী হিসেবেও প্রমাণ করেছে। প্রথমত নায়িকা হয়ে তার বিগস্ক্রিন প্রেজেন্সে দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা যেমন বিশাল ছিল সেটাই তাকে একজন জাত অভিনেত্রী হয়ে ওঠার জন্য প্ল্যাটফর্ম করে দিয়েছিল।

প্রথমত নায়িকা হয়ে ওঠার প্রসেসটা কেমন ছিল সে কথাই বলা সঙ্গত। শাবনূর বাফায় নাচ শিখেই চলচ্চিত্রে আসে। নাচটা তাকে সমসাময়িক নায়িকাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থানের পরেও নিজস্বতায় চিহ্নিত করাতে ভূমিকা রেখেছে। নাচে যেটি ঘটে শারীরিক কসরত, মুদ্রা প্রভৃতির পাশাপাশি এক্সপ্রেশনের বিষয়টিও থাকে তাই নাচের মধ্যে অভিনয়ের একটা যোগাযোগ সবসময়ই থাকে। সেই গুণটি শাবনূরকে সাহায্য করেছে অভিনয় করার জন্য। বাফা যেহেতু দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠান সেই সুযোগটিও শাবনূরের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করেছে। তার নাচের গানের মধ্যে ‘এই মন চায় যে’ ছবির ‘নিমুড়া’ গানটি দেখলেই সুদক্ষ নাচের ডিসপ্লে অনায়াসে চোখে পড়ে।

শাবনূর নায়িকা হয়ে উঠেছিল তার স্ট্রাগল পিরিয়ডের সময়টিতেই। দর্শক তাকে দ্রুত গ্রহণ করেছিল। ‘চাঁদনী রাতে’-র অভিষেকের পর তার সাফল্য না থাকলেও শাবনূরের প্রতি দর্শক আকৃষ্ট হওয়াটা ছিল প্রথম ধাপ শাবনূরের নায়িকা হয়ে ওঠার পেছনে। ‘দুনিয়ার বাদশা’-র নায়ককেন্দ্রিক প্রাধান্যের পরেও শাবনূরের অভিনয় ছিল নজরকাড়া এর বাইরে ‘শুধু তোমারি’-র মতো ছবিতেও নায়িকা শাবনূরের অভিনয়ই ছিল প্রাইমারি স্টেজ নায়িকা ইমেজ গড়ে ওঠার পেছনে। গ্ল্যামার তো ভিন্ন জিনিস কিন্তু নায়িকা শাবনূরের প্ল্যাটফর্ম তৈরিই হয়েছিল অভিনয়ের মাধ্যমে যেটি তাকে পরবর্তীকালে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে দিয়েছে ক্যারিয়ার গঠনে। যেখানে দেখা যেত নায়কের তুলনায় নায়িকা শাবনূর অভিনয়ে পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে। সুপ্রিম বিষয়টাই ছিল অভিনয়।

শাবনূরের অভিনয়ে লাইভ যে বিষয়টি ছিল যাকে আমরা সাদা চোখে বা চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দৃশ্যের মতোই ট্রিট করি। শাবনূর সেই লাইভ বিষয়টাকে বড়পর্দায় প্রাণবন্ত করতে পেরেছিল। লাইভ অভিনয়ের বিষয়টি শাবনূরের জন্য ছিল বাই বর্ন অভিনয়প্রতিভার একটি বিষয়।

সালমান শাহ শাবনূরের জন্য নব্বই দশকে সবচেয়ে বড় টনিক ছিল। দুজন দুজনের পরিপূরক জুটি হয়ে উঠেছিল। ‘তুমি আমার’ ছবি দিয়ে শুরু হয়ে মোট ১৪টি ছবির এ জুটি ন্যাচারাল অভিনয়ের জুটি হিসেবে দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পায়। জুটিপ্রথায় পরে আমিন খান, রিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস, শাকিব খানদের সাথে তার স্ক্রিন প্রেজেন্স চমৎকার।

নায়িকা শাবনূরের বৈচিত্র্যের দিকে তাকালে তার শতভাগ নায়িকা হয়ে ওঠাটা পরিষ্কার হয়। নব্বই দশকে সালমান শাহর সাথে অসাধারণ রসায়নের ছবিগুলোর পাশাপাশি আমিন খানের সাথে ‘হৃদয় আমার’ ছবির পাশাপাশি অমিত হাসানের সাথে ‘রঙিন উজান ভাটি’-র মতো ছবির পর রিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস ও শাকিব খানের সাথে সফল জুটির মাধ্যমে এবং অন্যান্য নায়কদের সাথেও নানা ধরনের ছবিতে বৈচিত্র্যময় শাবনূরকে দেখা যায় এবং শতভাগ নায়িকা হয়ে ওঠে।

অভিনেত্রী শাবনূরের অভিনেত্রী হয়ে ওঠার পেছনে পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ছবি এবং এর বাইরে গল্প বা সাহিত্যনির্ভর ছবিরও ভূমিকা আছে। যখন একজন শাবনূরকে ‘মোল্লাবাড়ির বউ’ ছবিতে আমরা দেখব সেটি পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ছবি হবার পরেও তার অভিনয় একজন অভিনেত্রীকে আমাদের সামনে বড় করে তোলে। ‘কাল সকালে’ ছবির মালতী চরিত্রের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ‘চার সতীনের ঘর’ ছবির শাবনূর বাণিজ্যিক ছবির পরেও নিজের অভিনয়গুণে নজর কাড়ে। এমনকি ‘ছোটবোন’ ছবিতে মানসিক ভারসাম্য হারানো শাবনূরের অভিনয় নায়িকা নয় অভিনেত্রী শাবনূরকে আমাদের সামনে তুলে ধরে। ‘বাঙলা’ ছবির বোবা শাবনূরের অভিনয় হতবাক করে দেয় এবং ‘নিরন্তর’ ছবির শাবনূরের অভিনয় স্বাভাবিক অভিনয়ের মাধ্যমে অন্য এক শাবনূরকে চেনায়। তার সংলাপ-‘গায়ে হাত দিও না তো মা, গায়ে হাত দিলে পুরুষের হাত মনে হয়’ দর্শকমনে রেখাপাত করে শাবনূরের অভিনয়শক্তিতে। এভাবে অভিনেত্রী শাবনূরের ইমেজ গড়ে ওঠে যা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে এবং থাকবে।

শাবনূরের অভিনয়ে কোনো স্টেরিওটাইপ বৈশিষ্ট্য নেই যেটি তাকে গতানুগতিক আবহে বন্দী করবে। তাঁর অভিনয়ে বৈচিত্র্য বেশি সেজন্য শাবনূরকে বিভক্ত করে যায় নানা চরিত্রের অভিনয়ে। নায়িকা ও অভিনেত্রী হয়ে ওঠার শতভাগ দৌড়ে তাই শাবনূর পূর্ণাঙ্গভাবেই উত্তীর্ণ।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *