বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে এমন অনেক জুটি রয়েছেন, যাদের রসায়ন পর্দায় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে বারবার। তাদের অভিনয়শৈলী, রোমান্টিক মুহূর্তগুলো এবং ক্যারিশমাটিক উপস্থিতি বহু দর্শকের মনোযোগ কেড়েছে, এবং তারা হয়ে উঠেছেন ইন্ডাস্ট্রির ফেভারিট অন-স্ক্রিন জুটি। এদের অভিনয় যেনো সিনেমার কাহিনীকে বাস্তবের রূপ দেয়। আসুন, আমরা বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির এমন কিছু জুটির কথা তুলে ধরি, যারা তাদের মুগ্ধকর রসায়নের জন্য আজও স্মরণীয়।
১. সালমান শাহ ও শাবনূর
বাংলাদেশি সিনেমার ইতিহাসে সালমান শাহ ও শাবনূরের জুটি এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। নব্বইয়ের দশকে এই জুটি যেমন জনপ্রিয়তা পায়, তেমনই প্রেম ও রোমান্সের প্রতীক হয়ে ওঠে। “স্বপ্নের ঠিকানা,” “আনন্দ অশ্রু,” ও “সুজন সখী” এর মতো সিনেমাগুলোতে এই জুটির অভিনয় এবং পর্দার রসায়ন দর্শকদের হৃদয়ে গভীরভাবে স্থান করে নিয়েছিল। সালমান-শাবনূরের আবেগময় সংলাপ এবং কেমিস্ট্রি আজও অনেকের কাছে স্মৃতিময়।
২. রিয়াজ ও পূর্ণিমা
নব্বইয়ের দশকের শেষ এবং ২০০০ সালের শুরুর দিকে রিয়াজ ও পূর্ণিমা জুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাদের জুটির কেমিস্ট্রি ছিলো অত্যন্ত প্রাকৃতিক এবং মনোমুগ্ধকর। “মনের মাঝে তুমি,” “হৃদয়ের কথা,” “শাস্তি” সহ বহু সিনেমায় তাদের এই রসায়ন দর্শকদের প্রিয় হয়ে ওঠে। এই জুটির সবচেয়ে বড় শক্তি ছিলো তাদের অভিনয়ের সাবলীলতা, যা সিনেমার গল্পে বাড়তি প্রান যোগাতো।
৩. মান্না ও মৌসুমী
ঢালিউডের জনপ্রিয় তারকা মান্না এবং মৌসুমী একাধিক সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেছেন। “কে আমার বাবা,” “বীর সৈনিক,” “আম্মাজান” এর মতো সিনেমায় মান্না-মৌসুমী জুটির কাহিনী এবং রোমান্টিক দৃশ্যগুলো দর্শকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলো। তাদের কেমিস্ট্রির শক্তিশালী উপস্থিতি এবং মান্নার শক্তিশালী নায়কোচিত চরিত্র এই জুটিকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে গিয়েছিল।
৪. শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস
বর্তমান সময়ে ঢালিউডের অন্যতম জনপ্রিয় এবং চর্চিত জুটি হল শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। প্রায় এক দশক ধরে এই জুটি একাধিক হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন। “কিং খান,” “নাম্বার ওয়ান শাকিব খান,” “মাই নেম ইজ খান,” “হিরো দ্য সুপারস্টার” ইত্যাদি সিনেমায় তাদের অভিনয় দর্শকদের কাছে বেশ প্রিয়। এই জুটি তাদের রোমান্টিক এবং অ্যাকশন দৃশ্যের জন্য বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। শাকিব-অপু জুটির জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তাদের একসঙ্গে দেখা মানেই ছিলো একটি ব্লকবাস্টার সিনেমার নিশ্চয়তা।
৫. ফারুক ও ববিতা
বাংলা চলচ্চিত্রের ক্লাসিক জুটিগুলোর মধ্যে ফারুক ও ববিতার নাম অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। “আলোর মিছিল,” “সুজন সখী,” “লাঠিয়াল” এর মতো চলচ্চিত্রে ফারুক-ববিতা জুটির অভিনয় এবং তাদের পর্দায় উপস্থিতি আজও দর্শকদের মনে গেঁথে রয়েছে। ববিতার সাবলীল অভিনয় এবং ফারুকের নায়কোচিত চরিত্র পর্দায় এতোটাই বাস্তবসম্মত ছিলো যে দর্শকদের মধ্যে এই জুটি হয়ে ওঠে রোমান্সের এক অনন্য উদাহরণ।
৬. ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষ
একসময় ইলিয়াস কাঞ্চন এবং অঞ্জু ঘোষ জুটিও বাংলা সিনেমায় ব্যাপক সাড়া জাগায়। তাদের সিনেমা “বেদের মেয়ে জোছনা” ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র হিসেবে আজও রেকর্ড ধরে রেখেছে। এই জুটির আকর্ষণীয় কেমিস্ট্রি এবং গ্রামীণ গল্পে তাদের অনবদ্য অভিনয়, সাধারণ দর্শকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
৭. সোহেল রানা ও কবরী
ঢালিউডের কিংবদন্তী জুটির তালিকায় সোহেল রানা এবং কবরীর নামও আছে। তাদের অভিনীত “তিতাস একটি নদীর নাম,” “সারেং বউ,” “বাহারাম বদনাম” এর মতো সিনেমাগুলো কাহিনী এবং অভিনয়ের মেলবন্ধনের জন্য আজও সিনেমাপ্রেমীদের স্মৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে। সোহেল রানার নায়কোচিত দৃঢ়তা এবং কবরীর মিষ্টি এবং আবেগঘন অভিনয় তাদের জুটিকে দারুণ জনপ্রিয় করে তুলেছিল।
৮. সাইমন সাদিক ও মাহিয়া মাহী
ঢালিউডের নবীন অভিনেতাদের মধ্যে সাইমন সাদিক ও মাহিয়া মাহীর জুটি সাম্প্রতিক সময়ে দর্শকদের মধ্যে ভালোই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। “পোড়ামন,” “জান্নাত,” “কৃষ্ণপক্ষ” এর মতো সিনেমায় তাদের অন-স্ক্রিন কেমিস্ট্রি এবং রোমান্সের উপস্থাপন দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
বাংলাদেশি সিনেমার জুটিগুলোর এই রসায়নই প্রমাণ করে যে ভালো অভিনয় এবং কেমিস্ট্রি কিভাবে একটি সাধারণ গল্পকেও বিশেষ করে তুলতে পারে। এসব জুটি কেবল সিনেমায় সফল হয়ে ওঠেননি; বরং তারা দর্শকদের মনের মধ্যে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছেন। এইসব পর্দার জুটি বাংলা সিনেমার ইতিহাসে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই আজও তাদের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছে।