• May 18, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

পরজীবী (Parasite): একটি দক্ষিণ কোরিয়ান মাস্টারপিস

ByDidarul Islam Himel

Nov 7, 2024

পরজীবী (Parasite) একটি দক্ষিণ কোরিয়ান চলচ্চিত্র যা বিশ্বের সিনেমা প্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে। এটি ২০১৯ সালে মুক্তি পায় এবং পরিচালনা করেন বং জুন-হো (Bong Joon-ho)। পরজীবী শুধুমাত্র দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্রে নয়, বরং বিশ্বব্যাপী একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। এই প্রবন্ধে আমরা পরজীবী চলচ্চিত্রটির বিশ্লেষণ এবং তার প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

কাহিনী সংক্ষেপ

পরজীবী চলচ্চিত্রের গল্প মূলত দুটি পরিবারের উপর ভিত্তি করে। এক পরিবার হলো কিম পরিবার, যারা দরিদ্র এবং ছোট্ট একটি বাসায় বসবাস করে। অন্য পরিবার হলো পার্ক পরিবার, যারা ধনী এবং একটি বৃহৎ আধুনিক বাড়িতে থাকে। কিম পরিবার বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে পার্ক পরিবারের সাথে যুক্ত হয় এবং তাদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। গল্পটি কিম পরিবারের প্রতারণা এবং তাদের পরিণতি নিয়ে এগিয়ে যায়।

চলচ্চিত্রের থিম এবং প্রতীকীতা

পরজীবী চলচ্চিত্রের প্রধান থিম হলো শ্রেণি সংগ্রাম এবং সামাজিক বৈষম্য। চলচ্চিত্রটি দরিদ্র এবং ধনী শ্রেণির মধ্যে পার্থক্য এবং সেই পার্থক্যের পরিণতি তুলে ধরেছে। এছাড়া, চলচ্চিত্রটিতে অনেক প্রতীকীতা রয়েছে, যা গল্পের গভীরতা এবং অর্থবোধকে আরও বৃদ্ধি করে।

১. সিঁড়ি এবং উচ্চতা

পরজীবী চলচ্চিত্রে সিঁড়ি এবং উচ্চতা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী ভূমিকা পালন করে। কিম পরিবারের বাসা নিচু স্থানে এবং তারা সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে ওঠে, যা তাদের সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে। অন্যদিকে, পার্ক পরিবারের বাসা উচ্চ স্থানে, যা তাদের উচ্চ সামাজিক অবস্থান এবং ক্ষমতা প্রদর্শন করে।

২. ভূমধ্যস্থলী এবং পরিবেশ

চলচ্চিত্রের বিভিন্ন দৃশ্যে ভূমধ্যস্থলী এবং পরিবেশ ব্যবহার করে শ্রেণি সংগ্রামের প্রতীকীতা তুলে ধরা হয়েছে। কিম পরিবারের ছোট এবং অবনত বাসা এবং পার্ক পরিবারের বিশাল এবং আধুনিক বাড়ি এই প্রতীকীতার একটি উদাহরণ।

৩. পাথর এবং উপহার

পরজীবী চলচ্চিত্রে পাথর এবং উপহার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী ভূমিকা পালন করে। কিম পরিবারের কাছে একটি পাথর উপহার হিসেবে আসে, যা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রতীক। এই পাথরটি চলচ্চিত্রের গল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনে দেয়।

চরিত্র বিশ্লেষণ

পরজীবী চলচ্চিত্রের প্রতিটি চরিত্র গভীরভাবে নির্মিত এবং তাদের মধ্যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে প্রধান চরিত্রগুলির বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:

১. কিম কি-তায়েক (Ki-taek)

কিম পরিবারের পিতা, যিনি একজন বেকার এবং অর্থনৈতিক ভাবে অসচ্ছল। তিনি তার পরিবারের জন্য ভালো কিছু করতে চান, তবে তার কৌশল প্রায়ই সমস্যা তৈরি করে।

২. কিম কি-উ (Ki-woo)

কিম পরিবারের ছেলে, যিনি শিক্ষিত এবং উচ্চাশী। তিনি পার্ক পরিবারের সাথে প্রথম যুক্ত হন এবং তাদের টিউটর হিসেবে কাজ শুরু করেন।

৩. কিম চুং-সুক (Chung-sook)

কিম পরিবারের মা, যিনি পরবর্তীতে পার্ক পরিবারের গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি একজন শক্তিশালী এবং দৃঢ় মহিলা।

৪. পার্ক ডং-ইক (Dong-ik)

পার্ক পরিবারের পিতা, যিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি তার পরিবারের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল এবং সমৃদ্ধ।

৫. পার্ক ইয়েওন-কিয়ো (Yeon-kyo)

পার্ক পরিবারের মা, যিনি সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়। তিনি তার পরিবারের সুখ এবং সমৃদ্ধির জন্য সবসময় সচেতন।

চলচ্চিত্রের শৈল্পিক দিক

পরজীবী চলচ্চিত্রটির শৈল্পিক দিকগুলোও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বং জুন-হোর পরিচালনা, সিনেমাটোগ্রাফি, সম্পাদনা এবং সঙ্গীত চলচ্চিত্রটিকে একটি বিশেষ মাত্রায় নিয়ে গেছে।

১. পরিচালনা

বং জুন-হোর পরিচালনা চলচ্চিত্রটিকে একটি বিশেষ মাত্রায় নিয়ে গেছে। তিনি প্রতিটি দৃশ্য এবং চরিত্রকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছেন, যা চলচ্চিত্রটির গভীরতা এবং অর্থবোধকে বৃদ্ধি করেছে।

2. সিনেমাটোগ্রাফি

পরজীবী চলচ্চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফি অত্যন্ত প্রশংসিত। দৃশ্য এবং ফ্রেমের ব্যবহারে চলচ্চিত্রটির গল্প বলার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আলোকচিত্র এবং ক্যামেরার কোণ ব্যবহার করে শ্রেণি সংগ্রাম এবং পরিবেশের প্রতীকীতা তুলে ধরা হয়েছে।

৩. সম্পাদনা

চলচ্চিত্রটির সম্পাদনা অত্যন্ত সুক্ষ্ম এবং দক্ষ। দৃশ্যগুলির সংগতি এবং রীতিবোধ সম্পাদনার মাধ্যমে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। সম্পাদনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির সাসপেন্স এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

৪. সঙ্গীত

পরজীবী চলচ্চিত্রের সঙ্গীতও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চলচ্চিত্রটির প্রতিটি দৃশ্যে সঙ্গীতের ব্যবহার গল্পের গভীরতা এবং আবেগ বৃদ্ধি করেছে। সঙ্গীতের মাধ্যমে দর্শকদের মানসিক অবস্থা এবং অনুভূতি উন্নত হয়েছে।

চলচ্চিত্রের প্রভাব

পরজীবী চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। এটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এবং পুরস্কারে সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। পরজীবী দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

১. অস্কার পুরস্কার

পরজীবী চলচ্চিত্রটি ২০২০ সালে একাডেমি পুরস্কারে (অস্কার) চারটি বিভাগে পুরস্কার জয় করে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্রের জন্য একটি বড় সাফল্য। এটি সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা মূল চিত্রনাট্য এবং সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার জয় করে।

২. কান চলচ্চিত্র উৎসব

পরজীবী চলচ্চিত্রটি ২০১৯ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাম ডি’অর পুরস্কার জয় করে। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম চলচ্চিত্র, যা এই পুরস্কার জয় করে।

৩. গোল্ডেন গ্লোবস

চলচ্চিত্রটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারেও সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার জয় করে।

৪. বাফটা পুরস্কার

পরজীবী চলচ্চিত্রটি ব্রিটিশ একাডেমি অফ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা) পুরস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র এবং সেরা চিত্রনাট্য বিভাগে পুরস্কার জয় করে।

পরজীবী চলচ্চিত্রটি একটি মাস্টারপিস, যা শ্রেণি সংগ্রাম, সামাজিক বৈষম্য এবং মানব প্রকৃতির গভীর বিশ্লেষণ করে। বং জুন-হোর পরিচালনা, শৈল্পিক দক্ষতা এবং গল্প বলার ক্ষমতা চলচ্চিত্রটিকে একটি বিশেষ স্তরে নিয়ে গেছে। পরজীবী শুধুমাত্র দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্র নয়, বরং বিশ্বব্যাপী একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। এটি একটি চলচ্চিত্র যা দর্শকদের চিন্তা এবং অনুভূতির দুনিয়ায় প্রবেশ করতে বাধ্য করে।

আশা করি, এই প্রবন্ধটি আপনাদের পরজীবী (Parasite) চলচ্চিত্রের বিশ্লেষণ এবং তার প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা প্রদান করবে এবং আপনাদেরকে এই মাস্টারপিস সম্পর্কে আরও জানতে উৎসাহিত করবে। 🎬✨

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *