• May 18, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

টেইলর সুইফটের গান যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সে

ByDidarul Islam Himel

Mar 9, 2024

পপ কালচারের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয় সুইফটের গান। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কালচারাল স্টাডিজ’, ‘ইংরেজি’ ও ‘মিউজিক’ কোর্সে তার গান পড়ানো হয়, যাদের মধ্যে অন্যতম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং বার্কলি কলেজ অব মিউজিক।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যত নারী শিল্পী আছেন তাদের লেখা গান যদি গবেষণার বিষয়বস্তু হয় তবে সেখানে একজন শিল্পীর উল্লেখ থাকতেই হবে। তিনি হলেন বিশ্বের অন্যতম তারকা শিল্পী টেইলর সুইফট। এই মূহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল ও প্রভাবশালী গায়িকা তিনি।

সম্প্রতি তার নতুন অ্যালবাম ‘মিডনাইটস’ এর জন্য চতুর্থবারের মতো গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতে রেকর্ড করেছেন টেইলর সুইফট। পপতারকাদের মধ্যে একমাত্র বিলিনিয়ার তিনি।

শুধু তাই নয়, পপ কালচারের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয় সুইফটের গান। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কালচারাল স্টাডিজ’, ‘ইংরেজি’ ও ‘মিউজিক’ কোর্সে তার গান পড়ানো হয়, যাদের মধ্যে অন্যতম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং বার্কলি কলেজ অব মিউজিক।

টেইলরের গল্প বলার ক্ষমতা অসাধারণ। প্রতিটি গানে তিনি একটি গল্প বলার চেষ্টা করেন যেখানে তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও আবেগ হাজির হয় একটি বৈশ্বিক চালচিত্র নিয়ে। গানের মধ্যে সুইফট চেষ্টা করেন প্রেম, বিরহ, ক্ষমতা, স্বাধীনতা, আত্মশক্তি ইত্যাদি জটিল সব অভিপ্রায়কে তুলে নিয়ে আসতে যার মধ্যে অনুপ্রেরণার সুরও থাকে।

টেইলর সুইফটের অধিকাংশ গানেই নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি—বিরক্তি, অপরাধবোধ, পাগলামো এমনকি সংগ্রামের কথাও উঠে এসেছে। যেমন—’দ্য ম্যান’ গানে তিনি নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে পেশাগতভাবে নারীরা যে বৈষম্যের মুখোমুখি হয় সে বিষয়ে বলছে। গানের কথায় উঠে আসে পুরুষ হয়ে জন্মালে তার যাত্রা কিছুটা সহজ হতো কি না সে বিষয়ক ভাবনা। তিনি বলছেন, যতটুকু শ্রম তিনি দিচ্ছেন পুরুষ হয়ে জন্মালে একই শ্রমের জন্য তিনি আরও সফল, আরও সম্মান পেতেন কি না, তাকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হতো কি না। দুর্ভাগ্যবশত, এটি এমন এক অনুভূতি যা প্রায় প্রত্যেক নারীই অনুভব করে থাকেন। পৃথিবীর অনেক দেশেই কর্মক্ষেত্রে একই পরিমাণ শ্রম দিয়েও নারীরা পুরুষের সমান পারিশ্রমিক পান না।

তার অন্যতম সমাদৃত গান ‘মার্জোরি,’ এটি তিনি লিখেছেন তার দাদিকে নিয়ে। গানটিতে তিনি বলছেন, ‘নেভার বি সো পোলাইট, ইউ ফরগেট ইওর পাওয়ার’ অর্থাৎ কখনোই এতটা ভদ্র হয়ো না যে নিজের শক্তিই ভুলে যাও।

টেইলর সুইফটের জনপ্রিয় দুই গান ‘ইউ নিড টু কাম ডাউন’ ও ‘শেইক ইট অফ’ দুটোই লেখা হয়েছে হেটারদের উদ্দেশ্যে। ‘ইউ নিড টু কাম ডাউন’ গানটি সরাসরি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে লেখা যারা অযথাই আক্রমণ করেন, অপমান করেন, সবসময় অন্যকে নিচু করে দেখাতে চান। এই গানে এলজিবিটিকিউ+ কমিউনিটির পক্ষেও কথা বলেছেন টেইলর। প্রায় একইরকম দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি লিখেছেন ‘শেইক ইট অফ’। তিনি বলছেন, ‘হেটার্স গনা হেইট’ অর্থাৎ যারা ঘৃণা ছড়ায় তারা সেটাই করতে থাকবে; নিন্দা ঝেড়ে ফেলুন এবং নিজের মতো করে জীবনযাপন করুন।

টক্সিক সম্পর্ক ছেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘ক্লিন’। অন্যদিকে, নারীদের বন্ধুত্ব, বন্ডিং নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘লং লিভ’। বন্ধু ও ভক্তরা যারা প্রতিটি যাত্রায় তার পাশে ছিল তাদের নিয়ে এই গান। এটি নারী দিবসের অন্যতম থিম সং। এই গানে তিনি বলছেন, নারীর মঙ্গলের জন্য অপরিহার্য নারীর বন্ধুত্ব।

টেইলর সুইফটের গান ‘ইউ আর অন ইওর ওউন, কিড’ গানটিতে একটি বাক্য এমন, ‘সো মেক দ্য ফ্রেন্ডশিপ ব্রেসলেটস, টেক দ্য মোমেন্ট অ্যান্ড টেস্ট ইট’। গানটি প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রের কারুশিল্পের চেইনশপ মাইকেলসের স্টোরগুলোতে হঠাৎ বিশেষ ধরনের ‘ফ্রেন্ডশিপ ব্রেসলেট’ বিক্রির ধুম পড়ে যায়। মাইকেলস জানিয়েছে, অনেক স্থানে এই ব্রেসলেটস বিক্রি ৫০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।

টেইলর সুইফট এতটাই প্রভাবশালী যে দুনিয়াজুড়ে বিভিন্ন দেশের নেতারাও তাদের দেশে পারফর্ম করার জন্য সময়ে সময়ে তাকে অনুরোধ করেছেন। কারণ, তারা মনে করেন যে এর ফলে তাদের দেশের অর্থনীতি চাঙা হবে। যেমন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত বছরের জুলাইয়ে এক্সে (টুইটারে) দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ‘আমি জানি কানাডার শহরগুলো আপনাকে পেতে পছন্দ করবে। আমরা আশা করি, শিগগিরই আপনাকে দেখতে পাব।’

সুইফটকে লাতিন আমেরিকা ভ্রমণের জন্যও অনুরোধ জানিয়েছেন চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক।

যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সে টেইলর সুইফটের গান

টেইলর সুইফটের গানের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—নারী ও লিঙ্গ; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং জনগনের অভিমত; রাজনীতি ও সামাজিক প্রভাব; ফিকশান ও নন-ফিকশন, আমেরিকান জাতীয়তাবাদ ও শ্বেতাঙ্গ সমকামী মানুষের অধিকার এবং নারীবাদ।

তার গানে যেমন ভালবাসা ও বিচ্ছেদের দিক উঠে এসেছে ঠিক তেমনি ওঠে এসেছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তির ব্যতিক্রম অবস্থান এবং নিপীড়ন।

হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে তার গান নিয়ে যে কোর্স ডিজাইন করা হয়েছে সেটির নাম ‘টেইলর সুইফট অ্যান্ড হার ওয়ার্ল্ড’। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ফ্যান কালচার, সেলিব্রিটি কালচার, বয়ঃসন্ধিকাল ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের অনুভূতি, একজন শ্বেতাঙ্গ নারীর দৃষ্টিভঙ্গি, ট্রান্সআটলান্টিক লেখা এবং কুয়ার সাবটেক্সট নিয়ে কোর্সটিতে পড়ানো হবে।

হাভার্ড ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সে টেইলর সুইফটের গানের মধ্য দিকে সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন একাডেমিক পাঠকে বুঝার চেষ্টা করা হয়। তার গানের ভেতর দিয়ে সময়ের সঙ্গে ব্যক্তি হিসেবে তার নিজের পরিবর্তন এবং তার এই বেড়ে ওঠা কীভাবে পপ কালচারের অভেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে তা তাত্ত্বিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়।

পাঠক্রমে তার গান আমেরিকান সমাজ তথা পপ কালচারের অধীনস্থ পুরো পৃথিবীর মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের রূপরেখা বুঝতে সাহায্য করে।

টেইলর সুইফটের গান লেখার যাত্রা তার বয়সের সাথে সাথে বিচিত্র পথে গিয়েছে। কান্ট্রিসং থেকে শুরু করে পপ দুনিয়ার রমরমা বিষয় নিয়ে তিনি লিখেছেন, লিখেছেন ফোকলোর নিয়েও। তার গানের অন্যতম বিশেষত্ব হলো তিনি বেশিরভাগ সময় ফার্স্ট পার্সনে (প্রথম পুরুষে) লেখেন যার ফলে দর্শক সরাসরি তার গানের সাথে একাত্ম অনুভব করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *