• June 8, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

বড়পর্দায় মুক্তি দেয়ার মতো ‘অসময়’

নির্মাতা কাজল আরেফিন অমির কাজ আমি ব্যক্তিগতভাবে বরাবরই পছন্দ করি। অমি যা বিশ্বাস করেন, যা দর্শকদের বলতে চান, তাই বলেন। অন্য কারো জুতোয় পা গলান না। সমালোচকদের কথায় কর্ণপাত করেন না। তাই বলে পৃথিবীর বাকি সব নির্মাতাদের মত অমি’রও সব কাজ যে অসাধারণ হয়, তাও না। কিছু কাজ দারুণ হয়, কিছু কাজ মাঝারি গোছের, আর মাঝেমধ্যে কিছু কাজ হতাশও করে। বঙ্গবিডির প্রযোজনায় ‘অসময়’ প্রথম ক্যাটাগরিতে পড়বে। দারুণ গল্প ভাবনা, কৌশলী নির্মাণ, দুর্দান্ত সব অভিনয়শিল্পীদের সম্মিলন সব মিলিয়ে ‘অসময়’ দেখার পুরোটা সময় আমরা উপভোগ করেছি।

স্টার সিনেপ্লেক্সের প্রিমিয়ার শোতে কাজল আরেফিন অমি আমাদের সিটে বসিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে কে কার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন, সে বিতর্কে যেতে চাই না। তবে ইরেশ যাকের-শরাফ আহমেদ জীবনের জুটি ছিল এই সিনেমার অন্যতম ‘হাইলাইট’। আমাদের নাটক-সিনেমায় ব্রোম্যান্স তেমন একটা দেখা যায়না। সেদিক থেকে অমিকে ধন্যবাদ এমন দুটি চরিত্রের জন্য। এস.আই. মোখলেস ও সাংবাদিকের হালিমের চরিত্রগুলো যেন জাদুর মন্ত্রে লেখা হয়েছে। সামান্য এদিক সেদিক হলেই চরিত্রগুলো বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতো, ভাঁড়ামো মনে হতো। কিন্তু ইরেশ-জীবন জুটি তাদের মেধা এবং পরিচালক অমি’র সুদক্ষ নির্দেশনার মাধ্যমে ছক্কা পিটিয়েছেন। বাচ্চু ভাইকেও দেখলাম এই জুটির অভিনয়ে ভীষণভাবে মুগ্ধ হতে। যদি ‘অসময়’ বড় পর্দার চলচ্চিত্র হতো, আমি নিশ্চিত কমিক অভিনয়ের জন্য ইরেশ যাকের এবং শরাফ আহমেদ জীবন দুজনই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতেন।

রুনা খান আমার দেখা বাংলাদেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীদের একজন। পর্দায় তার মুখে সংলাপ থাকুক বা না থাকুক, ভীষণ শক্তিশালীভাবেই তিনি যে কোনো চরিত্রকে ধারণ করেন। ইন্তেখাব দিনার-রুনা খান দুই জাঁদরেল অভিনয়শিল্পীর যুগলবন্দী অভিনয় অপলক নয়নে দেখছিলাম, আর গর্ব করছিলাম: তারা দুজনই বাংলাদেশের অভিনেতা। অবশ্য শুধু আমি নই, বেডরুমে দুজনের কথার যুদ্ধের একটি দৃশ্য শেষে হল ভর্তি দর্শক মুহূর্মুহু তালি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন: দিনার-রুনা অপ্রতিদ্বন্দ্বী-সেরা।

তারিক আনাম খান সাম্প্রতিক সময়ে নিজের চেনাজানা চরিত্র থেকে বেরিয়ে কিছুটা ভিন্ন চরিত্র নিজেকে মেলে ধরেন। তার অভিনয়ের শক্তিতে যে কোনো সাধারণ দৃশ্যও অসাধারণ হয়ে যায়। মনিরা মিঠু আমার আরেক প্রিয় অভিনেত্রী। বেশ কয়েকটি দৃশ্যে তার অভিনয় দেখে আমার আশেপাশের দর্শকরা বলছিলেন: এত সাবলীল, বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় তিনি কি করে করেন?

তাসনিয়া ফারিণ এ মুহূর্তে তরুণ অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম সেরা একজন, এটা আমরা সবাই জানি। ‘উর্বি’ চরিত্রে ফারিণ নিজেকে ভেঙেছেন বারবার। উর্বি’র যাতনা, হতাশা অনেক দৃশ্যে ফারিণ চোখ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সংলাপের আশ্রয় নেননি।

জিয়াউল হক পলাশ শুরু থেকেই আমার দৃষ্টিতে একজন সুঅভিনেতা, তার চেয়েও সুনির্মাতা, তার চেয়েও ভালো মানুষ। পলাশ কোন পর্যায়ের জনপ্রিয়, তা প্রিমিয়ার শোতেই সবাই বুঝতে পেরেছেন। স্বল্প সময়ের উপস্থিতিতেই পলাশ যে পরিমাণ শিষ, হাত তালি পেয়েছেন, তা অনেকের জন্যই ঈর্ষণীয়।

শিমুল সরকার, লামিমা লাম বরাবরের মত এবারও ভীষণ সাবলীল। তাদের অভিনয় গল্পে প্রাণ দিয়েছে।

শাশ্বত দত্ত যতক্ষণ স্ক্রিনে ছিলেন, ভালো। তবে আমি জানি, শাশ্বত’র আরো অনেক কিছু দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। আব্দুল্লাহ রানা সহ অন্যান্য ছোট বড় চরিত্রে যারা অভিনয় করেছেন, প্রত্যেকেই নিজেদের সেরাটুকুই দেয়ার চেষ্টা করেছেন।

আমি ঘরে বসে ‘অসময়’ দেখতে চাইনা। কিছু পরিমার্জন, যোজন-বিয়োজন করে সহজেই ‘অসময়’ কে বড় পর্দার দর্শকদের উপহার দেয়া যেত। সাম্প্রতিককালে এরকম আরো বেশ কিছু ওয়েবফিল্ম, ওয়েব সিরিজ দেখেই আমার এই খেদের জায়গা তৈরি হয়েছে। কাজল আরেফিন অমি সিনেমার গল্পগুলো এভাবে নাটক/ ওটিটিতে খরচ না করুক, খুব শিগগীরই বড় পর্দায় আসুক, ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু ব্যবসাসফল/ জনপ্রিয় সিনেমা দিক-এই কামনা রইলো। অমি এবং বঙ্গবিডিকে শুভেচ্ছা বছরের শুরুতেই ‘অসময়’-এর মাধ্যমে আমাদের সুন্দর সময় উপহার দেয়ার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *