• June 8, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

সালমান-মৌসুমীর রসায়ন

অভিনয় দক্ষতা, সৌন্দর্য, ফ্যাশন সচেতনতা ও ব্যক্তিত্ব গুণে সালমান–মৌসুমী জুটি আজও জনপ্রিয়। মাত্র ৪টি চলচ্চিত্রে একসঙ্গে অভিনয় করলেও এ জুটি বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা জুটিগুলোর অন্যতম। সালমানকে যেমন ‘স্টাইল অবতার’ হিসেবে স্বীকার করা হয়, মৌসুমীও তেমনি এখনও দ্যুতি ছড়াচ্ছেন।

প্রথম ছবি মুক্তির পর পরই তারা হয়ে উঠেছিলেন দর্শকদের কাম্য জুটি। কিন্তু ব্যক্তিগত মান-অভিমানের কারণে দূরে সরে যান। সিদ্ধান্ত নেন একসঙ্গে অভিনয় না করার। সালমান জুটি বাঁধেন শাবনূরের সঙ্গে, মৌসুমী ওমরসানীর সঙ্গে। এ দুই জুটির ছবির মধ্যে দারুণ প্রতিযোগিতা হতো। জুটিতে জুটিতে প্রতিযোগিতা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বিরল। পরে তাদের মধ্যে আবারও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। হয়ত সালমান বেঁচে থাকলে তাদের একসঙ্গে আরও ছবিতে দেখা যেত।

সালমান-মৌসুমী জুটি চারটি ছবির তিনটিই হিন্দি চলচ্চিত্রের আদলে নির্মিত। চারটি ছবিই দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। এ সব ছবিতে তাদের আলাদা আলাদা লুক ও অভিনয়ে দেখা গেছে। ফলে সালমান-মৌসুমী বলতে রোমান্টিক ছবি বুঝালেও টাইপড ছবি বোঝায় না। আর সব ছবিই সুনির্মিত।

কেয়ামত থেকে কেয়ামত (১৯৯৩)

কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছিল ভারতের আমির খান-জুহি চাওলা জুটির ব্লকবাস্টার ছবি কায়ামাত সে কায়ামত তকের অফিশিয়াল রিমেক। মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালের ২০ মার্চ, ঈদুল ফিতরে। পরিচালনায় সোহানুর রহমান সোহান, প্রযোজক সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এবং ব্যানার আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেড। আরও অভিনয় করেন রাজীব, আহমেদ শরীফ, আবুল হায়াত ও ডন। প্রথম আবির্ভাবেই বাজিমাত করেন এ জুটি। অবশ্য প্রথমে শাবনাজ-নাঈমকে এ ছবির জন্য বাছাই করা হয়। কিন্তু তারা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। ছবিটি ঠাঁই পায় সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করা বাংলা ছবির তালিকায়। গত বছর ছবিটি মুক্তির বিশ বছর পালিত হয়।

শেক্সপিয়রের রোমিও-জুলিয়েটের আদলে নির্মিত ছবিটিতে দুই তরুণ-তরুণীর প্রেম ও দুই অভিজাত পরিবারের দ্বন্দ্ব ঠাঁই পায়, যার সমাপ্তিও ছিল করুণ।

বলিউডের তুলনায় এ ছবির বাজেট আহামরি কিছু নয়। কিন্তু চিত্রনাট্য ও পরিচালনার গুণে ছবিটি মাস্টারপিসে পরিণত হয়। এ ছাড়া রুনা লায়লা ও আগুনের গাওয়া গানগুলো জনপ্রিয় হয়। ছবিটি অধিকাংশ হলেই ৪ সপ্তাহ হাউসফুল ব্যবসা করে।

অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪)

অন্তরে অন্তরে হিন্দি ছবি ‘আও পেয়ার করে’র আনঅফিশিয়াল রিমেক, যা নির্মাতা বা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কখনও স্বীকার করেননি। কিন্তু গুণী পরিচালক শিবলী সাদিক বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বাইরের একটি কাহিনীকে নিজেদের করে কীভাবে উপস্থাপন করতে হয়। সেন্টমার্টিনের দুর্দান্ত লোকেশানে চিত্রায়িত ছবিটির গান দারুণ জনপ্রিয় হয়। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সেন্টমার্টিনকে পরিচিত করতে চলচ্চিত্রটির ভূমিকা রয়েছে। স্থানীয়রা দ্বীপের একটি অংশকে মৌসুমীর নামে নামকরণ করেন।

প্রথম ছবিতে সাধারণ তরুণের লুকে সালমানকে দারুণ লাগে। এবার বিদেশ ফেরত তরুণ চরিত্রে নতুন স্টাইল নিয়ে হাজির হন। এ ছবিতে প্রথমবারের মতো মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার করেন, যা অচিরেই তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। শহর থেকে দূরে থাকা সাধারণ তরুণীর চরিত্রে মৌসুমীও দারুণ অভিনয় করেন। তার পোশাক বাছাই ছিল সালমানের সঙ্গে মানানসই।

ছবিটি আশা প্রোডাকশনস লিমিটেডের ব্যানারে নির্মিত হয়। আরও অভিনয় করেন আনোয়ারা, রাজীব, দিলদার ও নাসির খান। সঙ্গীত পরিচালনা করেন আলম খান। সব গানই জনপ্রিয় হয়। এ ছবির পর সালমান-মৌসুমী ঘোষণা দেন আগে চুক্তিবদ্ধ ছবি ছাড়া নতুন কোনো ছবিতে অভিনয় করবেন না, যা ভক্তদের জন্য ছিল হতাশাজনক।

সাম্প্রতিক সময়ে ‘অন্তরে অন্তরে’ ছবির রিমেক করছেন তরুণ পরিচালক আতিক রহমান। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন নীরব ও অমৃতা খান।

স্নেহ (১৯৯৪)

ড্রামা ঘরানার ছবিটি পরিচালনা করেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও প্রযোজনা করেছে আজাদ পিকচার্স। সালমান-মৌসুমী ছাড়াও অভিনয় করেছেন শাবানা, আলমগীর ও হুমায়ুন ফরীদি। তবে এ ছবিতে সালমান-মৌসুমী জুটির অভিনয় দেখানোর তেমন সুযোগ ছিল না। তখনকার টিপিক্যাল শাবানা-আলমগীর অভিনীত ছবিগুলোর একটি। তবে নন-ভিলেন চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেন হুমায়ুন ফরীদি। আলী হোসেনের সুরে এ ছবির দুটি গান খুবই জনপ্রিয় হয়। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর।

দেনমোহর (১৯৯৫)

সালমান-মৌসুমী জুটির সর্বশেষ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ, ঈদুল ফিতরে। এটি ছিল সালমান খানের হিন্দি চলচ্চিত্র ‘সনম বেওয়াফা’র অফিশিয়াল রিমেক। ছবিটি পরিচালনা করেন শফি বিক্রমপুরী, প্রযোজনার ব্যানার যমুনা ফিল্ম কর্পোরেশন লিমিটেডের। আরও অভিনয় করেন রাজীব, আহমেদ শরীফ, নাসির খান ও মিরানা জামান।

এ ছবিটিতে অভিজাত লুকে দেখা গেছে তাদের। মূলত দুই জমিদার পরিবারের দ্বন্দ্ব নিয়ে ছবির কাহিনী এগিয়ে যায়। সামন্তবাদী দ্বন্দ্ব নিয়ে নির্মিত বাংলা চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীর সুরে বেশ কয়েকটি গান জনপ্রিয় হয়। চিত্রায়িত হয় সিলেটের প্রাকৃতিক পরিবেশে। ছবির কালার কম্পোজিশনও ছিল দারুণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *