• June 26, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

তিন হাস্যময় সন্ন্যাসীর গল্প

ByDidarul Islam Himel

Jan 8, 2024

প্রাচীন চীনে ৩ জন লাফিং সন্ন্যাসী খুব জনপ্রিয় ছিলেন। লাফিং বা হাস্যময় সন্ন্যাসী নিয়ে এখনো চীনে প্রচলিত আছে বিভিন্ন লোক গল্প এবং মিথ।

এই ছোটগল্পটি একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প। যা প্রাচীণ চীনের ৩ সন্ন্যাসীর গল্প যা বতমান চীনে এখনো প্রচলিত আছে।

প্রাচীন চীনে ৩ জন লাফিং মংক বা সন্ন্যাসী ছিলো। কেউ তাদের নাম জানতে পারে নি, কারন তারা তাদের নাম কাউকে বলেন নি। সেসময়ের চীনে তারা শুধু হাস্যময় সন্ন্যাসী নামেই প্রচলিত ছিল।

তারা সবসময় এক সাথে চীনের বিভিন্ন প্রান্তের গ্রামে শহরে ঘুরে বেড়াতেন এবং হাসতেন । কোন একটি শহরের উপকন্ঠে বা প্রধান চত্ত্বরে গিয়ে তারা তিন জন গোল হয়ে দাঁড়িয়ে প্রথমে আস্তে আস্তে হাসতে শুরু করতেন , কিছুক্ষনের মধ্যে ধীরে ধীরে তাদের আসেপাশে মানুষ জড়ো হয়ে যেতো এবং তাদের হাসি দেখে তারাও নিজেদের হাসি থামিয়ে রাখতে পারতো না। তারা তাদের সম্পূর্ন জীবন সমগ্র চীন জুড়ে মানুষের মাঝে হাসি ছড়িয়ে দিয়েছেন, মানুষকে দেয়া এটাই তাদের একমাত্র শিক্ষা। তাদের হাসতে দেখলে কারো পক্ষে না হেসে থাকা যেত না। তাদের হাসি দেখে মনে হতো জীবনটা হাসির জন্য, এখানে কষ্টের কোন ঠাই নেই।

একটাসময় এমন হলো যে তারা পুরো চীনেই পরিচিতি পেয়ে গেলে হাস্যময় সন্ন্যাসী নামে। সমস্ত চীনের মানুষেরা তাদের ভালোবাসতো, সম্মান ও শ্রদ্ধা করতো।

কেউ কখনও এর আগে এমনভাবে প্রচার করেনি যে জীবনকে কেবল হাসিই হতে হবে আর কিছু নয়। তারা এমনভাবে হাসছিল যেন তারা মহাজাগতিক রসিকতা বুঝতে পেরে গিয়েছিল। কেউ তাদের নাম জিজ্ঞেস করলেও তারা হাসতো। আর চীনের মানুষরা তাদের নাম দিয়েছিল ৩ জন হাস্যময় সন্ন্যাসী (থ্রি লাফিং মংক)।

৩ সন্ন্যাসী সমগ্র চীন ঘুরে এসে বৃদ্ধ বয়সে চীনের নর্থ প্রেসিডেন্সের একটি ছোট গ্রামে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করে। একদিন পুরো গ্রামে চড়াও করে খবর রটে গেলো ৩ সন্ন্যাসীর একজন মারা গেছেন।

সত্যিই তাদের একজন মারা গেলেন! তা দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে ভীর জমাতে লাগলো। গ্রামের মানুষ ও দূর থেকে আসা লোকজন এবার আশা করছিলেন সারাজীবন ধরে হেঁসে যাওয়া লোকগুলো এবার নিশ্চয়ই নিজের বন্ধুকে হারিয়ে চোখের জল ফেলবে। কারন গ্রামের লোক তাদের কখনোই কাঁদতে দেখে নি ও শোনে নি।

গ্রামের লোকেরা তাদের বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়ে দেখে ২ বুড়ো সন্ন্যাসী কাঁদার বদলে আরো বেশি জোড়ে জোড়ে হাসছে।

মানুষের মাঝে কেউ কেউ তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আপনাদের কষ্ট হচ্ছেনা?
তার এই প্রথম সাধারণ মানুষদের সাথে কথা বললেন, তিনি বললেন, কাল রাতেই আমরা ৩ জন একটি বাজি ধরেছিলাম, ৩ জনের মাঝে কে সবার প্রথম এই পাপময় পৃথিবী থেকে চলে গিয়ে সবার আগে পরম আত্মার সাথে এক হয়ে যেতে পারে। যে সবচেয়ে বেশি পবিত্র তারই এই বাজি জেতার কথা। সে জিতে গিয়েছে।

দুই বুড়ো সন্ন্যাসী হাসলেও কিন্তু গোটা গ্রাম ছিল শোকাহত। যখন মৃত সন্ন্যাসীর অন্তেষ্টিক্রিয়ার জন তার দেহ চিতায় রাখা হয় তখনো তারা হেসে যাচ্ছিল।

সেই গ্রামে অন্তেষ্টিক্রিয়ায় একটি নিয়ম ছিল। মৃতের দেহ সৎকারের আগে গোসল করিয়ে পরিষ্কার করে নতুন কাপড় পরিয়ে তবে মৃতদেহ চিতায় তুলতে হবে। কিন্তু দুই সন্ন্যাসী মৃত সন্ন্যাসীর স্নান না করিয়ে, কাপড় পরিবর্তন না করিয়েই দেহ সৎকারের জন্য চিতায় তুলে দেন।

এই ব্যপারে মানুষজন প্রশ্ন করলে তারা বলেন, মারা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন যেন তাকে তার চিতায় পোড়ানোর আগে যেন গোসল এবং নতুন বস্ত্র না দেয়া হয়। কারন তিনি এই পৃথিবীর পাপ এবং ময়লা এতে কখনো লাগতে দেননি।

যখন তাকে চিতায় রেখে আগুন দেয়া হলো , তখন বাকি দুই জন মংক হাসছিলেন। এবং জড়ো হওয়া জনতা তাদের হাসি দেখছিলো। জ্বলন্ত চিতা থেকে ১০০ রং এর চীনা আতশবাজি আকাশে ছড়িয়ে পরলো বাকি সবাই সেই হাসতে থাকা দুইজন জ্ঞানীর সাথে যোগ দিলো এবং হাসতে শুরু করলো।

এই পৃথিবীতে নিজেকে সব কষ্ট, কঠীনতা, অশান্তি থেকে নিজেকে বাচিয়ে রাখার একমাত্র উপায় হাসি। পৃথিবীতে বেচে থাকাটা অনেক সুন্দর। আপনার প্রতিবারের হাসি আপনাকে নতুন করে প্রাণবন্ত করে তোলে।

মানুষ ছাড়া আর কোন প্রাণীই হাসতে সক্ষম নয়। তাই জীবনের বিবর্তনে হাসি একটি অত্যন্ত উচ্চ শিখর দেখায়। হাসির খুব গভীর কারণ আছে। একঘেয়েমি এবং হাসি হল মেরু দ্বৈত, এগুলি মেরু বিপরীত। তারা একসাথে যায়। আর মানুষই একমাত্র প্রাণী যে উদাস। একঘেয়েমি মানবতার প্রতীক।

কুকুর এবং বিড়াল দেখুন; তারা কখনো বিরক্ত হয় না। মানুষ গভীর একঘেয়েমি মনে হয়. ” বুদ্ধি যত বেশি, একঘেয়েমি তত বেশি। নিম্ন বুদ্ধিমত্তা এত উদাস না। এই কারণেই আদিমরা বেশি সুখী। আপনি দেখতে পাবেন আদিম সমাজের লোকেরা সভ্য সমাজের চেয়ে বেশি সুখী।

বার্ট্রান্ড রাসেল প্রথমবারের মতো কিছু আদিম উপজাতির সংস্পর্শে এসে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন। আদিবাসীরা এত খুশি ছিল, তারা মোটেও বিরক্ত ছিল না। জীবন তাদের জন্য একটি আশীর্বাদ ছিল। তারা হতদরিদ্র ক্ষুধার্ত, প্রায় নগ্ন ছিল। প্রতিটি উপায়ে, তাদের কিছুই ছিল না। কিন্তু জীবন নিয়ে তারা কখনোই বিরক্ত হননি।

আজ পৃথিবীর সকল দেশের কম বেশি সবাই জীবনে বিরক্ত। বুদ্ধিমত্তা ও সভ্যতার মাত্রা যত বেশি, একঘেয়েমিও তত বেশি।
তাই সবসময় হাসুন কারণ একমাত্র হাসিই পারে একঘেয়েমিকে দূর করতে।

তথ্যসূত্র: ওয়ার্ল্ড ফ্যামাস ফোকটেইল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *