• June 8, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

মনে পড়ে তোমাকে; পরিচালক – মনতাজুর রহমান আকবর; শ্রেষ্ঠাংশে – রিয়াজ, রিয়া সেন, সিজার, দিলদার, ডন, শান্তা ইসলাম, হুমায়ুন ফরীদি, এটিএম শামসুজ্জামান প্রমুখ; উল্লেখযোগ্য গান – যখনই তোমাকে দেখেছি দুচোখে; মুক্তি – ১৭ মার্চ ২০০০

মনতাজুর রহমান আকবর অ্যাকশন ছবির জন্য পরিচিত পরিচালক। কিন্তু তিনি শুধু অ্যাকশন ছবির নির্মাতাই ছিলেন না। তাঁর আরো কিছু ছবি আছে যেগুলোর সাথে দর্শকের পরিচিতি কম। ‘প্রেম দিওয়ানা’ ছবিটির কথা বলা যেতে পারে। তাঁর আলাদা ধাঁচের ছবি যেখানে মান্না-চম্পার প্রেম ও বিরহের পাশাপাশি কমেডি অভিনেতাকে খল অভিনেতা বানানোর একটা ব্যতিক্রমী চেষ্টা তিনি করেছেন। রোমান্টিক ছবির নির্মাতা তিনি যে খুব ভালো সে দাবি করাটা অনেকের কাছে ঠিক মনে নাও হতে পারে তবে ‘মনে পড়ে তোমাকে’ তাঁর রোমান্টিক ড্রামা যে ছবিটি তাঁকে আলাদাভাবে চেনায়।

রিয়াজের ক্যারিয়ারে তখন বসন্ত চলছে। একের পর এক মানসম্মত ছবি আর ন্যাচারাল অভিনয় দিয়ে নিজের একটা আলাদা দর্শক তৈরি করেছিল। তার বিপরীতে টলিউডের রিয়া সেনকে নায়িকা করা হয়। রিয়া সেনকে সিলেক্ট করার জন্য তাদের বাড়িতেও পরিচালক গিয়েছিলেন।

ছবির গল্প চিরাচরিত ত্রিভুজ প্রেমের হলেও প্রেজেন্টেশন খুব ভালো ছিল। রিয়াজ-রিয়া সেনের পাশাপাশি মডেল সিজারকে নেয়া হয়।

ছবির সবচেয়ে সুন্দর রোমান্টিক সিকোয়েন্স ছিল জানালার এপার-ওপারে রিয়াজ ও রিয়া সেনের কথোপকথন। রিয়াজের সেইসময়ের লুক অসাধারণ ছিল বিশেষ করে হেয়ার স্টাইল। রিয়া সেনকেও গ্ল্যামারাস লেগেছে।

ছবির কমেডি পার্টটা দারুণ। হুমায়ুন ফরীদি ও এটিএম শামসুজ্জামান ছিল প্রধান আকর্ষণ কমেডির। দিলদারের কমেডিও ম্লান হয়ে গিয়েছিল তাঁদের কাছে। কয়েকটা সিকোয়েন্স আছে মজার –

* হুমায়ুন ফরীদির গাড়ি পথের মধ্যে এটিএমের সাথে ধাক্কা খেলে ফরীদির কাপড়চোপড় নোংরা হয়ে যায়। ফরীদি কৈফিয়ত চাইলে বলে-‘আপনি যদি রাস্তার মধ্যে চ্যাগাইয়া খাড়ান তাহলে তো এসব হবেই।’ ফরীদি বলে-‘চ্যাগাইয়া? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই চ্যাগাইয়া?’ শব্দটা মজার।

* ফরীদি বাড়ি গেলে কেউ তাকে চেনে না। বারবার বলার পরেও চেনে না। শান্তা ইসলাম ফরীদির স্ত্রী। রেগে যায়-‘এসব ফকির কিভাবে বাড়িতে ঢোকে তোরা কি করিস।’ কাজের লোকরা মারতেও থাকে তখন ফরীদি জগের পানি দিয়ে মুখটা পরিষ্কার করে নেয়। মজার সিকোয়েন্স।

* বিয়ের দিন রিয়াকে ডন তুলে নিয়ে যাবার সময় ফরীদির অহঙ্কারের জন্য রিয়াজ, সিজার কাউকেই যেতে দেয় না এটিএম। ফরীদি পরে ক্ষমা চেয়ে মেয়েকে বাঁচাতে বললে এটিএম রিয়াজদের বলে-‘হেরা যেমন ভিলেনের লাহান নিয়া গেল তোরাও তেমনি নায়কের লাহান মাইরা নিয়া আয়।’ সংলাপটা বলার ধরণ ছিল মজার।

এটিএম শামসুজ্জামান এমন একজন অভিনেতা যিনি সিরিয়াস অভিনয়, কমেডি অভিনয়, খলনায়ক ও ভালো মানুষ সব চরিত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। এ ছবিতে তার কমেডি পার্টটা দর্শককে নির্ভেজাল আনন্দ দেবে।

ছবির ত্রিভুজ প্রেমের জট খুলতে থাকে রিয়া সেনের ছোটবোনের জন্যই। সে সিজারকে সব খুলে বলে। তার বোন রিয়াজকে ভালোবাসে সেটা জানিয়ে দেয়। সিজার পরে সেটাই চায়। তাই বিয়ের দিন রিয়াজকে বর সাজিয়ে আনা হয়। আর বিয়েবাড়িতে জানা যায় রিয়াজ ও সিজার ছিল হারিয়ে যাওয়া ভাই এটা ছিল একটা টুইস্ট। আর ত্রিভুজ প্রেমের ছবিতে বাধা তো থাকেই স্বাভাবিকভাবে এটাতেও ছিল।

গানের মধ্যে ‘যখনি তোমাকে দেখেছি দুচোখে’ এ গানটি বেশি জনপ্রিয়। এছাড়া ‘যার মনে তুমি ছিলে একদিন’ গানটিও চমৎকার। রিয়ার আংটি বদলের দিনে রিয়াজের লিপে স্যাড সংটিও ভালো ছিল। রিয়াজ-রিয়া সেনের অভিনয় তাদের রোমান্টিক ড্রামার জন্য পারফেক্ট ছিল। হুমায়ুন ফরীদি ও এটিএম শামসুজ্জামান ছবির বিগ ফ্যাক্টর ছিল।

‘মনে পড়ে তোমাকে’ শতভাগ বিনোদনমূলক ছবি। একটা বাণিজ্যিক ছবি যেসব উপাদানে উপভোগ্য ও বিনোদনমূলক হয়ে ওঠে এ ছবিতে তাই আছে। মনতাজুর রহমান আকবর তাঁর প্রতিষ্ঠিত অ্যাকশন ছবির পরিচালনার বাইরে রোমান্টিক ড্রামাতেও সফল এ ছবিটিতে সে ছাপ আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *