[নায়ক রাজ্জাক পরিচালিত ও অভিনীত ‘বাবা কেন চাকর’ মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। সিনেমাটি এত জনপ্রিয়তা পায় যে ভারতের রিমেক হয়, পরিচালনা করেন স্বপন সাহা। সেখানকার জনপ্রিয় শিল্পীরা অভিনয় করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের পত্রিকায় সিনেমাটির রিভিউ করেন বদর বখতিয়ার। দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও লেখক শুরু থেকেই এ ছবির প্রতি বিরক্ত ছিলেন, তা রিভিউতে দৃশ্যমান। লেখার শেষ দিকে নায়িকার প্রতি ‘বডি শেমিং’মূলক মন্তব্য রয়েছে। যা ওই সময়ের রিভিউতে প্রায়ই দেখা যেতো। বিএমডিবি আর্কাইভ হিসেবে রিভিউটি হুবহু তুলে ধরেছে।]
বাবাকে কেন চাকর হতে হলো? গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নের উত্তর জানতে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে দিতে অধৈর্য হয়ে যাবে যে কেউ। ছবিতে বিরতি হয়ে যায় কিন্তু বাবা চাকর হন না। আরো সময় যায় তবু আসে না বাবার চাকর হওয়ার সময় এবং সত্যি বলতে কি, বাবা কখনোই চাকর হননি। তার স্ত্রৈণ এবং সাক্ষী গোপাল (দেখতেও গোপালের মতো) ছেলের সামনে এক ভদ্রলোক বাবাকে চাকর বলেছিলেন। ছেলে প্রতিবাদ না করে মৌন থেকেছিল। বাবার চাকর হওয়ার ঘটনা এতটুকুই।
এই অপমানে অবশ্য রাজপথে নেমে বাবা ঠেলাগাড়ি ঠেলতে শুরু করেছিলেন। সে হিসেবে বাবা কেন ঠেলছেন ঠেলাগাড়ি এরকম কিছু হতে পারতো ছবির নাম। শোনা যায়, ছবির অন্য কী যেন একটা নাম ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে ‘স্বামী কেন আসামী’ নামে একটি ছবি হিট করা নাম ধুয়ে পানি খাওয়ার জন্য বদলানো হয় নাম। গুজব সত্যি হলে, এটা একটা সচেতন প্রতারণা এবং সেই প্রতারণার দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের নায়ক রাজাকে। যিনি এই ছবির নির্মাতা, পরিচালক এবং সর্বগুণে গুণানিত। রূপে রূপবান ‘বাবা’। তার দাবি অনুযায়ী এই ছবিতে তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয় করেছেন। এটা নিজের ইমেজ ভাঙিয়ে ব্যবসা করার জন্য সস্তা স্টান্টবাজি ছাড়া কিছুই নয়। এটা রাজ্জাকের শ্রেষ্ঠ অভিনয় বলে মেনে নিলে রাজ্জাককে অপমান করা হয়।
ছবির ব্যাপারে নিজের ঢোল যেমন পিটিয়েছেন তেমনি। ছবিতেও ‘বাবা’ সেজে যখন তখন ঢোল বাজিয়ে বিরক্তির উদ্রেক করেছেন। আমি ইমানদার, আমি সৎ ভদ্র, বিনয়ী আরো কতো কি। বাবা ছিলেন প্রধান হিসাবরক্ষক- এরকম লোক ঘুস না খেয়ে থাকলে তাকে ধরে নিয়ে মিউজিয়ামে ভরে রাখার কথা। যাই হোক, মনে করি তিনি খুব সাধু, ফাইল ঠেকিয়ে ঘুস খাননি। তাহলে কি করে ঢাকা শহরে এম একটা বাড়ি করে ফেললেন যে বাড়িতে প্রত্যেক ছেলেমেয়ের জন্য আলাদা কক্ষ, আছে টেলিফোন, দামি সোফা। এই প্রশ্নের উত্তর কেউ জিজ্ঞেস করেনি বাবাকে। করলে চির সত্যবাদী ‘আল আমিন’ বাবাকে মিথ্যুক হতে হতো নিশ্চিত।
কাহিনী পুরো ঘুরপাক খেয়েছে বাবাকে কেন্দ্র করে। তারপর এসেছে তার তিন ছেলেমেয়ে। বড়ো ছেলেকে রাখা হয়েছিল কাজেকর্মে চেহারায় গোপাল বানিয়ে সম্ভবত ছোট ছেলের বীরত্ব দেখানোর জন্য। তা তো হবেই, ছোট ছেলে যে আসলেই বাবার ছেলে, বাবার একটা দায়িত্ব আছে না! হ্যাঁ, মেয়েলি চেহারা এবং আচরণের বাপ্পারাজ বাবার ছবিতে এমনই বীর হয়েছিলেন। যে, পেশাদার গুণ্ডারা তার হাতে মার খেয়ে বারবার নাস্তানাবুদ হয়েছে। মেরেছে সে তার ভাবিকেও এবং প্রেম করেছে এক বড়োলোকের মেয়ের সঙ্গে।