• June 9, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

[শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘চারিদিকে শত্রু’ মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। রুবেল, পপি ও হুমায়ূন ফরীদি অভিনীত সিনেমাটি মাঝারি মানের সাফল্য পায়। তবে খোকনের আলোচিত সিনেমার মধ্যে এর নাম নেই। ওই সময় সিনেমাটির রিভিউ করেছিলেন শেখ বাদল। লেখাটি বিএমডিবি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।]

আসুন আমরা একটি ঢালিউডি ছবির গল্প বলি- নায়ক একজন সৎ ও সাহসী পুলিশ ইন্সপেক্টর। সে শ্মশ্রুমণ্ডিত। কেন? কারণ আছে। নায়কদের সৎ ও সাহসী হতেই হয়, না হলে তো আর সিনেমা হয় না। ধরা যাক, নায়ক বাহাদুরের নাম রুবেল। তার মা রোজী সামাদ, ভাই আলীরাজ। ভাবি আত্মহত্যা করেছে। স্ত্রীর শোকে আলীরাজ নেশা করে বেড়ায়। মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীরা তার হাতে তুলে দেয় হেরোইন। এই অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি গ্যাং ও গ্যাং লিডার থাকতে হবে। ধরা যাক, তারা হুমায়ূন ফরীদি ও ইলিয়াস কোবরা।

যা হোক, দেশের পার্বত্য সীমান্তে এদের দৌরাত্ম্যে মাদকদ্রব্যের চোরাচালান ও বাণিজ্য বেড়ে যাবে। ইয়াং ইন্সপেক্টর রুবেলকে দায়িত্ব দেওয়া হবে দমনের। হি-ম্যান রুবেল চমৎকার মার্শাল আর্ট জানে। তদন্তে নেমেই ধরে ফেলে, এসপি শহিদুল আলম সাচ্চু ও একজন ডিডিজিও এই ব্যবসায় জড়িত। ফরীদীর সঙ্গে সাচ্চুর গোপন লেনদেনের দৃশ্য ভিডিও করে ফেলে রুবেল । এই ভিডিও টেপ নষ্ট করতে চাইলে ডিডিজিকে গুলি করে মেরে ফেলে রুবেল এবং হয় ফেরার। পালানোর পথে সে হারিয়ে ফেলে তার প্রমাণ-ভিডিও টেপ।

এবার আমাদের এক জোড়া সাইড নায়ক-নায়িকা দরকার হবে। ধরা গেলো, এরা আলেকজান্ডার বো ও খুশবু।

তো আমাদের সাইড নায়ক কুড়িয়ে পায় সেই ভিডিও টেপ। ওদিকে ফরিদী-কোবরা গং আলীরাজকে মেরে বানিয়ে দেয় পঙ্গু এবং মূক। ফেরারি রুবেল মমির মতো সারা গায়ে ব্যান্ডেজ বাধা বড়ো ভাই আলীরাজকে যেভাবে কাঁধে করে পালায়, তাতে এ পঙ্গুর এ জন্মে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা- সম্ভব না। যাক, তারা খুশবুদের বাড়িতে ঘর ভাড়া নেয়। জাগাটার নাম খাগানছড়ি, জেলা কক্সবাজার। একই স্পটে দানা বাঁধে গল্প। নায়ক, নায়িকা, খলনায়ক, সাইড নায়ক সব এখানের বাসিন্দা। বাহ!

পাঠক, ঢাকাই ছবির দরকারে এখানে একটি কাজ করতে হবে। সুম্পর্ক স্থাপন। নায়ক বা নায়িকাকে সাধারণত ভিলেনের ছেলে বা মেয়ে হতে হয়। তাই পপি হবে ভিলেন ফরীদির মেয়ে এবং সহনায়িকা খুশবুর বাল্যবন্ধু। সম্পর্ক স্থাপনের আরো জরুরি জিনিসটা পপির ড্রাইভারের চাকরি নেবে রুবেল। অবশ্যই ছদ্মবেশে। তাই রুবেল কেটে ফেলতে চুল ও দাড়ি। শুরু থেকেই সাধকের শ্মশ্রুমণ্ডিত হওয়ার কারণটা এতোক্ষণে পরিষ্কার হবে। রুবেল তো বেসিকেলি বেল। ন্যাড়া হতে অসুবিধা নেই একদম। তারপর পপি পানিতে পড়বে, রুবেল উদ্ধার করবে। পপি অপমান করবে, রুবেল ইংরেজিতে উত্তর দেবে। এই ইংরেজিতে পটে যাবে পপি। প্রেমে পড়বে। যেন ইংরেজি জানাটাই প্রেমে পড়ার বিরাট একটা পয়েন্ট। এক সময় পপি জেনে যাবে রুবেলের আসল পরিচয় এবং সে আসলে ফরীদির মেয়ে নয় এবং ফরীদি পপির সত্যিকারের বাবা-মা ও রুবেলের বাবার হত্যাকারী। শেষে বিরাট ফাইটের মাধ্যমে ফরিদী-কোবরা গং টাইট নিয়ে ছবি সমাপ্ত…

পাঠক, এতো ইতংবিতং না করে গল্পটা না বললেও হতো। একটি অ্যাকশনধর্মী বাংলা ছবির গল্প যা হয়, শহীদুল ইসলাম খোকনের চিত্রনাট্য ও পরিচালনার ‘চারিদিকে শত্রু’ ছবির গল্পও সেরকমই গতানুগতিক। এ ছবিতে মারাত্মক ও বিরাট ব্যাপার আছে। ছবিটির স্পট কক্সবাজার জেলার খাগানছড়ি। অথচ পুরো ছবিতে একজনও উপজাতিকে দেখা গেলো না, এক মুহূর্তের জন্যও না । পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনরা ‌‘বড়ো খোকন’ কবে হবেন?

পপির এটি মুক্তিপ্রাপ্ত দ্বিতীয় ছবি। ‘কুলি’ এবং ‘চারিদিকে শত্রু’তে তাকে বড়ো ধরনের অভিনয়-পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়নি। তাই পপি তার নিজস্ব ঐশ্বর্য সৌন্দর্য নিয়ে উৎরে গেছেন ভালোই। অবশ্য পপির কণ্ঠস্বরের অল্প কর্কশতা এবং ইংরেজি উচ্চারণের জড়তা কাটাতে হবে। ‘কুলি’র মতো এ ছবিতে পপিকে সেক্সসিম্বল করেননি পরিচালক। ধন্যবাদার্হ্য বিষয়। আর এ ছবিতে রুবেলকে পপির প্রেম নিবেদনের দৃশ্যটি চমৎকার। আধুনিক। ভালো লেগেছে।

পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন পরিমিতিবোধের পরিচয় দিয়েছেন আরো অনেক। বিশেষ করে ঐ দৃশ্যটি পপি পানিতে ডুবে গেলো, উদ্ধার করলো রুবেল। দর্শক যখন ভাবছে, এই চান্সেই চুমু, মানে নায়িকার ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস করাবে নায়ক। তখন দেখা গেলো পেঁপের ডাটা মুখে ঢুকিয়ে ফুঁ দিচ্ছে নায়ক। সুন্দর। ‘চারিদিকে শত্রু’ থেকে বলা যায় নায়িকা পপির ভবিষ্যৎ আরো সুন্দর-উজ্জ্বল। রুবেল ভালো অভিনয় করেছেন। নতুন নায়ক-নায়িকা আলেকজান্ডার বো ও খুশবু। খুশবু সখি বা নায়িকার ছোট বোনরা যা করে তা করেছেন। কিন্তু এগুতে হলে তাকে খাটতে হবে আরো। আর আলেকজান্ডার ভালো ভালো মার্শাল আর্ট জানেন কিন্তু তিনি কি জানেন, তার চেহারায় বলিউডের হালের সমীহ জাগানো হিরো অরবিন্দ স্বামীর ছায়া আছে? এটা কাজে লাগাতে পারেন তিনি।

বলিউডের ছবির গানই সাধারণত মেরে দেন সঙ্গীত পরিচালক আলম খান। কিন্তু এ ছবিতে তার গানের সুরগুলো মৌলিক। ড্রেস ডিজাইনও ভালো। কিন্তু মেরেছে এডিটিং ও ক্যামেরাম্যান হাসান আহমেদ। এডিটিংয়ের দুর্বলতা চলচ্চিত্রটিকে চলৎশক্তি দিতে পারেনি একদমই। আর হাসান সাহেব তো মনে হয় জুম ফরওয়ার্ড করা ছাড়া ক্যামেরার কোনো কাজই জানেন না। অবশ্য ভুল করেছেন পরিচালক সাহেবও। সম্ভবত নতুন নায়িকা পপির ওপর আস্থা রাখতে পারেননি। তাই ফার্স্ট হাফে তাকে খেলানইনি। প্রথমার্ধের এক ঘণ্টা ১৫ মিনিটে পপিকে তিনি দেখিয়েছেন মোটে মিনিট আড়াই। অথচ পপিকে নিয়ে যে ক্রেজ হয়েছে ইতিমধ্যে, খোকন সাহেব তা টের পাননি বোধ করি। তাই দর্শক যখন পপিকে পাওয়ার জন্য পাগল তখন তাকে তিনি বসিয়ে রেখেছেন সাইড লাইনে, মাঠের বাইরে। আর নর্তকীর জঘন্য নাচ না থাকলেই ভালো হতো। সব মিলে-ঝুলে ‘চারিদিকে শত্রু’র খুব একটা বন্ধু হয়নি দর্শকরা। ছবি ব্যবসা করছে মাঝারি মাপের।

  • রিভিউর পেপার কাটিং সংগ্রহ করেছেন কাব্য হোসাইন। বাংলা চলচ্চিত্র বিষয়ক একটি গ্রুপ থেকে নেয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *