প্যালেস্টাইন অঞ্চলটি তিনটি প্রধান ধর্ম—ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলামের জন্য পবিত্র ভূমি। ষোড়শ শতাব্দী থেকে এটি অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেখানে ধর্মীয় সহাবস্থান মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল।
তবে ১৯ শতকের শেষ দিকে ইউরোপে ইহুদিদের উপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে শুরু হয় জায়নবাদ আন্দোলন, যার লক্ষ্য ছিল ইহুদিদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা—প্যালেস্টাইনে।
- ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ঘটে জাতিসংঘের বিভাজন পরিকল্পনার মাধ্যমে, যা আরব দেশগুলো ও ফিলিস্তিনিরা প্রত্যাখ্যান করে।
- এর ফলে শুরু হয় প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ, এবং লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে।
- পরবর্তী কয়েক দশকে সংঘাত আরও ঘনীভূত হয়—বিশেষ করে ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল পশ্চিম তীর, গাজা, পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়।
✊ প্রতিরোধ ও রাজনৈতিক বিভাজন
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের দুটি মুখ্য রাজনৈতিক শক্তি হলো ফাতাহ (পশ্চিম তীরে) এবং হামাস (গাজায়)।
২০০৬ সালে হামাস নির্বাচনে জয়লাভ করলেও আন্তর্জাতিকভাবে তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, ফলে শান্তি আলোচনায় অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি হয়।
- প্রতিরোধের রূপ: পাথর ছোঁড়া থেকে শুরু করে রকেট হামলা, মানববন্ধন থেকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা—ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বহুমাত্রিক।
- ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া: গাজায় বিমান হামলা, বসতি সম্প্রসারণ, নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণ—যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত।
🌐 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্বজুড়ে এই সংঘাত নিয়ে মতবিভাজন রয়েছে:
- যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র, যদিও মাঝে মাঝে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছে।
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, রাশিয়া—এরা কোয়ার্টেট অফ দ্য মিডল ইস্ট নামে একটি শান্তি উদ্যোগে যুক্ত।
- আরব লীগ ফিলিস্তিনের পক্ষে শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে, বিশেষ করে মিশরের নেতৃত্বে।
সাম্প্রতিক হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ, সমর্থন ও নিন্দার ঢেউ উঠেছে। কেউ হামাসকে সন্ত্রাসী বলছে, কেউ বলছে এটি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।
🇧🇩 বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের স্বাধিকার আন্দোলনকে সমর্থন করে এসেছে।
- বাংলাদেশ সরকার বারবার ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে এবং জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
- বাংলাদেশি জনগণও সোশ্যাল মিডিয়া ও রাস্তায় প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে, মানবাধিকার ও মুসলিম সংহতির প্রশ্নে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছে।
তবে বাংলাদেশের অবস্থান কূটনৈতিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ—যেখানে মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন ও মুসলিম উম্মাহর সংহতির প্রশ্নে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়।
প্যালেস্টাইন প্রশ্নের সমাধান শুধু রাজনৈতিক নয়—এটি মানবিক, নৈতিক ও ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার বিষয়।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে এই সংকটে ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া শুধু নীতিগত নয়, এটি বিশ্ব মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।
Sources: