নগরবাউল জেমস, পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম। তারুণ্যের উন্মাদনা সবসময় তাকে ঘিরে থাকে। নতুন প্রজন্মের ভক্তরা তাকে ‘গুরু’ বলে ডাকে। তিনি হাত তুললেই থেমে যায় অনেক মুখরতা। তারায় তারায় রটিয়ে বলেন তুমি আমার, ছয়টি তারে লুকিয়ে আছে যার ছয় রকমের কষ্ট। গলা ছেড়ে বলেন, ‘ঠিক আছে বন্ধু’।
আজ ৬১ বছরে পা রাখলেন নগরবাউল জেমস। ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন। তবে, বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে।
২০০৭ সালের এক সন্ধ্যায় বারিধারার রেকর্ডিং রুমে বসে এক সাক্ষাৎকারে এই প্রতিবেদকের কাছে জেমস বলেছিলেন, ‘একদিন হুট করে গ্রামে চলে যেতে পারি। সেখানে গিয়ে চাষবাস করব। অবারিত সবুজের পথ ধরে অনেকদূর হেঁটে চলে যাবো।’
গ্রাম বলতে নওগাঁ জেলায় কথা বলেছিলেন তিনি। তারপর দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলেন। নীরবতা চিরে একসময় চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে দিনগুলোর কথা বলেছিলেন প্রাণখুলে।
জেমসের বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বাবার সঙ্গে গান নিয়ে অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন জেমস। চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে থাকা শুরু করেন। সেখানে থেকেই তার সংগীতজীবনের শুরু।
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ব্যান্ডদল ‘ফিলিংস’। জেমস ছিলেন সেই ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট। ১৯৮৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশিত হয়।
১৯৮৮ সালে ‘অনন্যা’ নামের অ্যালবাম প্রকাশের পর সুপারহিট হয়ে যান তিনি। এরপর ১৯৯০ সালে ‘জেল থেকে বলছি’, ১৯৯৬ সালে ‘নগর বাউল’, ১৯৯৮ সালে ‘লেইস ফিতা লেইস’ এবং ১৯৯৯ সালে ‘কালেকশন অফ ফিলিংস’ অ্যালবামগুলো ‘ফিলিংস’ থেকে বের করা হয়।
‘নগর বাউল’ ব্যান্ডের অ্যালবামগুলো হলো, ‘দুষ্টু ছেলের দল’ ও ‘বিজলী’। জেমসের একক অ্যালবামগুলো হলো—’অনন্যা’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’, ‘ঠিক আছে বন্ধু’, ‘আমি তোমাদেরই লোক’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘তুফান’ ও ‘কাল যমুনা’।
জেমসের গাওয়া সেরা ১০ গানের তালিকায় আছে—বাংলাদেশ, জেল থেকে বলছি, মা, দুঃখিনী দুঃখ করো না, লেইস ফিতা লেইস, বাবা, বিজলী, দুষ্টু ছেলের দল, মীরাবাঈ, পাগলা হাওয়া, গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া।
চলচ্চিত্র প্লেব্যাকেও সফল হয়েছেন জেমস। ২০১৪ সালে ‘দেশা: দ্য লিডার’ ও ২০১৭ সালে ‘সত্ত্বা’ ছবির ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ আমি’ গানের জন্য দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
শুধু দেশ নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপক জনপ্রিয় এই তারকা শিল্পী। বাংলা গানের পাশাপাশি ‘গ্যাংস্টার’ ছবির ‘ভিগি ভিগি’ গানটির মাধ্যমে বলিউডে যাত্রা শুরু হয় তার। এরপর ‘ও লামহে’ ছবিতে ‘চল চলে’ এবং ‘লাইফ ইন অ্যা মেট্রো’ ছবির ‘আলবিদা’ ও ‘রিস্তে’ শিরোনামের গানগুলো গেয়ে আলোচিত হয়েছেন তিনি।