• July 5, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

স্ট্যাচু অব লিবার্টি : ফ্রান্সের ভাস্কর্য যেভাবে আমেরিকার স্বাধীনতার প্রতীক হলো !

ByDidarul Islam Himel

Apr 6, 2024

প্রায় দেড়শ বছর ধরে আমেরিকার সাম্য আর মুক্তির প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’। আমেরিকার স্বাধীনতার ১০০ বছর উপলক্ষে ফ্রান্সের জনগণের পক্ষ থেকে ভাস্কর্যটি আমেরিকার জনগণকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।

এই প্রতিবেদনে আপনাদের জানাবো আমেরিকার নিউইয়র্কে অবস্থিত স্ট্যাচু অফ লিবার্টি সম্পর্কে কিছু বিস্ময়কর তথ্য।

রোমান দেবী ‘লিবার্টাস’ -এর আদলে সবুজ রঙের ঢিলেঢালা গাউন পরা এক নারীর অবয়ব ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’। ভাস্কর্যটির বাইরের নকশা করেন ফরাসি স্থপতি ‘ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি’, এবং এর ভেতরের নকশা করেন আরেক বিখ্যাত ফরাসি স্থপতি ‘গুস্তাভ আইফেল’। তিনি ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত ‘আইফেল টাওয়ার’ -এর নকশাকার হিসেবে বিখ্যাত। অতীতে বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে আমেরিকাকে সাহায্য করেছিল ফ্রান্স। আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জনের ১০০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ১৮৮৬ সালে ফ্রান্স ভাস্কর্যটি আমেরিকাকে উপহার দেয়। আমেরিকার নিউইয়র্ক পোতাশ্রয়ের মুখে লিবার্টি দ্বীপে ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’ -কে স্থাপন করা হয়। কারণ তৎকালীন সময়ে বহু ইউরোপীয় অভিবাসী নিউইয়র্ক বন্দরের মাধ্যমে আমেরিকায় প্রবেশ করছিল। এই ভাস্কর্যটি সেইসব অভিবাসীদেরকে আমেরিকায় স্বাগত জানাতো। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লক্ষ লোক স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখতে আসে।

১৯২৪ সাল পর্যন্ত ভাস্কর্যটির নাম ছিল ‘লিবার্টি এনলাইটেনিং দ্যা ওয়ার্ল্ড’। পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’। ভাস্কর্যটির নির্মাতা ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি তার মায়ের চেহারার আদলে মূর্তিটির চেহারা নকশা করেছিলেন। তার মায়ের নাম ছিলো ‘ক্যারলোট’। ভাস্কর্যটির ডান হাতে রয়েছে প্রজ্বলিত মশাল, এবং বাম হাতে রয়েছে একটি বই। বইটির উপরে ফরাসী ভাষায় লিখা আছে একটি তারিখ, ৪ জুলাই ১৭৭৬ ;এই দিনেই ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে আমেরিকা স্বাধীন হয়েছিল। স্ট্যাচু অব লিবার্টির মুকুটে রয়েছে সাতটি কাটা, যা সাত মহাদেশ ও সাত সমুদ্রকে নির্দেশ করে। স্ট্যাচু অব লিবার্টির মূল ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১৫১ ফুট ১ ইঞ্চি। তবে মাটি থেকে মূল বেদী সহ এর উচ্চতা ৩০৫ ফুট ১ ইঞ্চি। মূর্তিটির নাকের দৈর্ঘ্য ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি, এবং এর এক কান থেকে আরেক কানের দূরত্ব ১০ ফুট। স্ট্যাচু অব লিবার্টি’র পায়ে যে জুতা পড়ানো হয়েছে তা বাজারে বিক্রি করলে, সেই জুতার মাপ হত ৮৭৯। এর পায়ের কাছে পরে থাকা শেকল আমেরিকার মুক্তির প্রতীক। তামার তৈরি সমগ্র মূর্তিটির ওজন প্রায় আড়াই লক্ষ কেজি। স্ট্যাচু অব লিবার্টির ভেতরে ৩৫৪ টি সিঁড়ির ধাপ অতিক্রম করে মূর্তির মাথায় ওঠা যায়। মূর্তির মুকুটের কাছে রয়েছে ২৫ টি জানালা। যা অনেকটাই টওয়াচ-টাওয়ার’ হিসেবে কাজ করে।

স্ট্যাচু অব লিবার্টি তৈরী করতে সেই সময়ে খরচ হয়েছিল প্রায় পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার। বর্তমান সময়ে যা প্রায় দশ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমমূল্য।

স্ট্যাচু অব লিবার্টি সম্পূর্ণ মূর্তিটিই তৈরি করা হয়েছে ফ্রান্সে। লোহার ফ্রেমের উপর তামার পাত দিয়ে ৩০০ টি খন্ডে তৈরি হয়েছে মূর্তিটি। ১৮৮৫ সালে ২১৪ টি বাক্সে ভরে জাহাজে করে ভাস্কর্যটি আমেরিকায় পাঠানো হয়। ১৮৮৬ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ‘গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড’ ভাস্কর্যটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

স্ট্যাচু অব লিবার্টি প্রথম থেকেই দেখতে সবুজ রঙের ছিল না। এমনকি একে সবুজ রঙও করা হয়নি। মূর্তিটি তামার তৈরি হওয়ায় শুরুতে এর রঙ ছিল তামাটে। দীর্ঘকাল ধরে এর চারদিকে থাকা সমুদ্রের জলীয় বাষ্পের সাথে তামার বিক্রিয়ায় মূর্তিটি সবুজ রং ধারণ করেছে। এটি এক বিশেষ ধরনের মরিচা।

হাডসন নদীর উপর দিয়ে যখন ঝড়ো বাতাস বয়ে যায় তখন মূর্তিটি বাতাসের আঘাতে প্রায় ৩ ইঞ্চি ও এর হাতের মশালটি ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত কাঁপতে থাকে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬০০ টি বজ্রপাতের আঘাত সহ্য করে স্ট্যাচু অব লিবার্টি।

১৯২৯ ও ১৯৩২ সালে দু’জন দর্শনার্থী স্ট্যাচু অব লিবার্টি থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। বর্তমানে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই মূর্তির সিঁড়িগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

শুরু থেকেই স্ট্যাচু অব লিবার্টি -কে নিউ ইয়র্কের হাডসন নদীর পাড়ে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। ভাস্কর্যটির স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি মূর্তিটি নকশা করেছিলেন মিশরের সুয়েজ খালের পাড়ে স্থাপনের জন্য। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মিশর এই ভাস্কর্য নির্মাণের অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরবর্তীতে নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে ভাস্কর্যটি আমেরিকায় স্থাপন করা হয়। সুয়েজ খালের পাড়ে মূর্তিটি স্থাপনের আগে এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘ইজিপ্ট ব্রিঙিং লাইট টু এশিয়া’।

নিউইয়র্কের যেই দ্বীপটিতে মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে সেই দ্বীপের নাম ছিলো ‘বেডলে আইল্যান্ড’। তবে ১৯৫৬ সালে দ্বীপটির নাম পরিবর্তন করে ‘লিবার্টি আইল্যান্ড’ নামকরন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *