• June 9, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

সালতামামি ১৯৮৫: ব্যবসা না থাকার বছরেও ৫টি সুপারহিট, ১৩টি হিট

পূর্বাণী পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে ঢালিউডে সর্বাধিকসংখ্যক ছবি মুক্তি পায়, ৬৭টি। আগের বছর মুক্তি পায় ৫৪টি। যদিও পাকিস্তান আমলেই জহির রায়হানের হাত ধরে এই দেশে রঙিন ছবি তৈরি হয়। কিন্তু তারও দুই দশক পর বছরে মোট নির্মিত সিনেমার বড় একটি অংশ ছিল সাদাকালো। ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার মধ্যে রঙিন ৩৪টি, আংশিক রঙিন ১০ ও সাদাকালো ২৬টি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর সর্বাধিক ছবি মুক্তি পেলেও ব্যবসার দিক থেকে ছিল কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। ছবির হার বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়িক নীতির কথা বলে পূর্বাণী। যার কারণে যেনতেন সিনেমা বানানো শুরু হয়। যার কারণে পড়ে যায় মান।

প্রতিবেদন বলছে, বছর দুই আগে ক্যাপাসিটি ট্যাক্স পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে ছবির ব্যবসা বেড়ে যায়, ফলে ছবি নির্মাণের সংখ্যাও বেড়ে যায়। ক্যাপাসিটি ট্যাক্সের সুযোগে নির্মাতাদের মধ্যে কে কত তাড়াতাড়ি ছবি তৈরি করে সহজেই আশাতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা যায় সেই প্রতিযোগিতায় নেমে যান। এতে ছবি নির্মাণে যত্নের অভাব দেখা দেয়। প্রতেকেই যেনতেন প্রকারে ছবি নির্মাণ করতে শুরু করেন। পরিবর্তীতে ছবির সংখ্যা বাড়লেও ছবির গুণগত মান বৃদ্ধি পায়নি। তাই দর্শক একই ছবি বার বার দেখে দেশীয় ছবির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছেন।

‘অন্যদিকে ভিসিআরে বিদেশী ছবি দেখে দর্শকের চোখও খুলে গেছে’ উল্লেখ করে জানানো যাচ্ছে, তাই যেনতেন প্রকারে নির্মিত ছবি দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। অন্যদিকে ছবির নির্মাণ রায়ও অত্যাধিক বেড়ে গেছে। আর প্রতি সপ্তাহেই নতুন ছবি মুক্তি পাওয়ার ফলে দর্শকপ্রিয় গুটিকয় ছবি ছাড়া অন্য ছবিগুলোও আশানুরূপ ব্যবসা করার সুযোগ পায়নি। সব মিলিয়ে বলা যায়, পঁচাশি চলচ্চিত্র ব্যবসার দিক থেকে মোটেই উল্লেখযোগ্য বছর নয়।

অবশ্য ‘উল্লেখযোগ্য নয়’ বলেও সুপারহিট-হিটের যে খতিয়ান পূর্বাণী উপস্থাপন করে যা আজকের দিকে চোখ কপালে উঠার মতো। কারণ তারা পাঁচটি ছবিতে সুপারহিট ও ১৩টিকে হিট বলে উল্লেখ করেছে।

পঁচাশিতে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোকে ব্যবসার দিক থেকে মোটামুটিভাবে ছয় ভাগে ভাগ করা যায়।

সুপারহিট ব্যবসা: অস্বীকার (শাবানা, সোহেল রানা, সুচরিতা, আলমগীর, ইমরান, পাপড়ি – দীলিপ বিশ্বাস), রঙিন রূপবান (রোজিনা, সাত্তার – আজিজুর রহমান), চোর (সোহেল রানা, ববিতা, জাফর ইকবাল, রানী, রাজ্জাক – গাজী মাজহারুল আনোয়ার), তিন কন্যা (সোহেল রানা, ববিতা, চম্পা, ইলিয়াস কাঞ্চন, সূচন্দা – শিবলি সাদিক) ও সাহেব (ফারুক, রোজিনা – নারায়ণ ঘোষ মিতা)।

হিট: অন্যায় (আলমগীর, শাবানা, জসিম, সুচরিতা – এ জে মিন্টু), গীত (আলমগীর, সুচরিতা – মালেক আফসারী), প্রেমিক (ববিতা, জাফর ইকবাল, নূতন, অঞ্জনা, জুলিয়া – মঈনুল হোসেন), নেপালী মেয়ে (ববিতা, মাহমুদ কলি, জসিম, অঞ্জনা – আজিজুর রহমান বুলি), আওয়ারা (রাজ্জাক, শাবানা, সুচরিতা – কামাল আহমেদ), গুনাইবিবি (অঞ্জনা, সুজন – হারুনুর রশিদ), হিসাব নিকাশ (আলমগীর, রোজিনা, দোয়েল – প্রমোদকার), দুনিয়াদারী (আলমগীর, ওয়াসিম, সুচরিতা, রোজিনা, ফারজানা ববি – সাইফুল আজম কাশেম), সোনা বৌ (রাজ্জাক, ববিতা, নূতন – দিলীপ সোম), সৎ ভাই (রাজ্জাক, নূতন, আলীরাজ, মিনু রহমান – রাজ রাজ্জাক), দরদী শত্রু (শাবানা, আলমগীর, অঞ্জনা, জসিম – শওকত জামিল), সোনালী আকাশ (রাজ্জাক, কবরী – আব্দুল মতিন) ও  ন্যায় বিচার (রাজ্জাক, শাবানা, আলমগীর, নূতন – হাসমত)।

ভালো ব্যবসা: ফুলেশ্বরী (ফারুক, সুচরিতা, অঞ্জনা, উজ্জল, কাজরী – আজিজুর রহমান), দুই নয়ন (আলমগীর, রোজিনা, জাফর ইকবাল – মহসীন), অবিচার (মিঠুন চক্রবর্তী, রোজিনা, নূতন, উৎপল দত্ত – শক্তি সামন্ত ও সৈয়দ হাসান ইমাম), রামের সুমতী (ববিতা, প্রবীর মিত্র, সূচন্দা – শহিদুল আমিন), মা ও ছেলে (শাবানা, আলমগীর, বুলবুল আহমেদ, রেহানা – কামাল আহমেদ), জিদ্দী (সোহেল রানা, ববিতা, মাহমুদ কলি, অঞ্জনা – তমিজ উদ্দিন রিজভী), রক্তের বন্দী (অঞ্জু, মাহমুদ কলি, দিলারা, জাভেদ, প্রবীর মিত্র, সূচন্দা – শহিদুল ইসলাম খোকন) এবং আওলাদ (আলমগীর, অঞ্জু – হাফিজউদ্দিন)।

মোটামুটি ব্যবসা: রাধাকৃষ্ণ, রাইবিনোদিনী, ইন্সপেকটর, কোরবানী, মর্জিনা, মিস লংকা, মিস লোলিতা, রসিয়া বন্ধু, সতি নাগকন্যা, ফুলন, রাজকুমারী, হাসনাহেনা, ওয়ারিশ, কাবিন, নাদিরা; সাধারণ ব্যবসা: প্রেম কাহিনী, নকল শাহজাদা, পাতাল বিজয়, ঝিনুকমালা, পরীস্থান, ফুলকুমারী, রাজভিখারী, আমানত, আন্দাজ, মানিক রতন, সোনাই বন্ধু, বে-রহম, অহিংসা অসাধারণ, মীমাংসা, নেমকহারাম, ফয়সালা, সাথী, রাজকপাল, সোনার সংসার, মুজাহিদ ও পাগলী; উল্লেখযোগ্য ব্যবসা নয়: শমসের, বধূবরণ, শুভরাত্রি ও দহন।

সর্বাধিক ছবির নায়ক: ওয়াসিম (১৭), আলমগীর (১০), রাজ্জাক (৮), ইলিয়াস কাঞ্চন (৮) ও সোহেল রানা (৮)।

সর্বাধিক ছবির নায়িকা: অঞ্জু (১৮), রোজিনা (১৭), ববিতা (১৩), সুচরিতা (৯) ও নূতন (৯)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *