• June 8, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

রিভিউ/ আরেকটি ‘কেন’ যুক্ত হিট ছবি ‘শান্ত কেন মাস্তান’

মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘শান্ত কেন মাস্তান’ মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালের ৩১ জুলাই। তুমুল জনপ্রিয় এ সিনেমায় অভিনয় করেন মান্না, রাজ্জাক, শাহনাজ ও হুমায়ূন ফরীদিসহ অনেক। এ সিনেমার বিরুদ্ধে অশ্লীলতারও অভিযোগ রয়েছে। তবে ওই বছরের সালতামামি জানায়, এটিই ছিল ব্যবসাসফল ছবির তালিকায় এক নাম্বারে। ওই সময়ের ‘শান্ত কেন মাস্তান’-এর রিভিউটি লিখেছেন মোস্তফা মামুন। আলোচনার শেষ দিকে নায়িকা শাহনাজ সম্পর্কে ‌‘বডি শেমিং’ মন্তব্য রয়েছে, যার উপস্থাপন সম্পর্কে আমরা একমত নয়। আর্কাইভিংয়ের জন্য বিএমডিবিটি রিভিউটি অবিকল রয়েছে।]

শান্ত যে কেন মাস্তান হলো এটা তার পিতৃদেবতা রাজ্জাক শেষ দিকে এসে বুঝতে পারলেন। বুঝে শান্তর পক্ষে অস্ত্র ধরে শেষ করলেন হুমায়ুন ফরীদিকে, শেষ হলো ছবি। এই খুনের দায় অবশ্য তাকে নিতে হলো না, বহু খুন করে শান্তও দিব্যি বেঁচে গেলো- কারণ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করলেন ওরা নির্দোষ। এর আগে এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে হয়েছে অভূতপূর্ব কচলাকচলি। তাকে শাহজাহানপুর কিংবা আগারগাঁওয়ের বস্তিতে রাতও কাটাতে হয়েছে।

শান্তর বাবা রাজ্জাক, যাকে শান্ত কেন মাস্তান হলো বুঝতে ঘণ্টা তিনেক এবং ছবির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছর কয়েক লেগেছে। তিনি আগেও এমন প্রশ্নবোধক একটা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ‘বাবা কেন চাকর’ এই ছিল ঐ ছবির জিজ্ঞাসা। জিজ্ঞাসাযুক্ত আরেকটি ছবি ‘শান্ত কেন মাস্তান’। কিন্তু নামেই তো সব হয় না, ‘বাবা কেন চাকর’ ছিল সামাজিক দ্বন্দ্বের প্রাণস্পর্শী গল্প, আর এটা খুন, হানাহানি, ফাটাফাটি, রাহাজানিরই আরেকটা প্রদশনী। কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন রাখলেই সে সব দেখতে পায় না, কাজের মেয়ে ময়নার নাম যতোই প্রিন্সেস ডায়ানা রাখা হোক। তাকে কাজই করতে হয়। তবে দেশটার নাম বাংলাদেশ তো! এখানে অদ্ভুত এক ধারা— কিছু একটা নাম করলে ওটার নামধোয়া পানিও রুহ আফজা শরবত জ্ঞান করে লোকজন গিলে নেয়। শান্তর মাস্তান হওয়ার কাহিনীও এভাবেই গিলেছে লোকজন, বছরের ব্যবসাসফল ছবির তালিকায় ঢুকে গেছে ওটা। কোনো কোনো হিসাবে এই ছবিটিই নাকি বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি। নামের জোরেই।

সালতামামি ১৯৯৮: এ জে মিন্টু, শিবলী সাদিকদের পিছু হটার বছর

হ্যাঁ, নামের জোরেই। নাম বাদ দিলে একটুখানিও ব্যতিক্রম, বৈচিত্র্য নেই। দাঙ্গা, হাঙ্গামা, খুন হয়েছে, হরহামেশা, সর্বত্র উড়েছে তার নায়কের বিজয়ের কেতন। নায়ক মান্না বন্যা আর দুর্যোগের এই সময়ে দেশ জুড়ে রক্তবন্যা বইয়ে দিলেও পুলিশ তার পারে ফুলের টোকা দিতেও পারেনি। তারা অবশ্য খুব আন্তরিকতার সঙ্গে ফাইলপত্র তৈরি করছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি সবাই ব্যস্ত ছিলেন ফাইল তৈরিতে কিন্তু ফাইলের চাকা ঘুরতেই চায় না। এ জায়গাটাই শুধু বাস্তবানুগ। তবে ঢাকাই ছবি বাস্তব কিছু দেখাতে গেলে সেটাকে অতিবাস্তব করে তুলে– এখানেও বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের ভাবসাব দেখে মনে হলো তাকে মন্ত্রী করাই হয়েছে শান্ত সংক্রান্ত মামলাটি তদারকির জন্য। এজন্য কে আইজিপি আর কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটা বোঝা যায় ছবির সময় যখন পেরিয়ে গেছে অর্ধেকেরও বেশি। তিনি এছাড়া মাঝেমধ্যে ক্ষমতাবান এবং হারামি লোকজনকে ডেকে তাদের ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির হওয়ার নির্দেশ দেন। বশির মৃধা বা মিশাকে সেই নির্দেশ পেয়ে ক্ষেপে গিয়ে তাকেই গুলি করে বসে। আর এই হত্যার দায় শান্তর গায়ে চাপানোর একটা বুপ্রিন্ট তৈরি করে রেখেছিল হুমায়ূন ফরীদি, যে সম্পর্কে মান্নার বোনের জামাই এবং বাল্যবন্ধু। কৈ মাছের প্রাণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পেটেপিঠে এতোগুলো গুলি খেয়েও না মরে সব গুবলেট করে দেন।

হুমায়ুন ফরীদিই সব কুকর্মের নায়ক কিন্তু ছদ্মবেশে। শান্ত বুঝতেই পারেনি যে সে কালসাপ, এমনকি শান্তর ওকালতি বুদ্ধিহীন নির্বোধ হলেও ফরিদির চালে জড়িয়ে আক্রান্তই হয়েছেন বারবার। ফরীদির ভাইকে মান্না হত্যা করেছিল বলে প্রতিশোধ নিতে সে বিয়ে করে মান্নার ছোট বোনকে। তারপর সন্দেহের ঊর্ধ্বে থেকে খুন করে বড়ো ভাইকে, বোনকে খুন করেও আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়ে উল্টো রাজ্জাক পরিবারের কাছ থেকে পেতে থাকে সহানুভূতি। নিজে খুন করে মান্নার কাঁধে দোষ চাপিয়ে তাকে বানায় ফেরারি। তার ব্লুপ্রিন্ট মতো সবই হয়ে এসেছিল কিন্তু নায়িকা শাহনাজ শেষ পর্যন্ত এই বোকাবাহিনীর চোখের পর্দা সরায়। গুলিবিদ্ধ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কাঁধে করে এনে বস্তিতে যখন শান্ত ও তার দলবল তাকে আশ্চর্য কারিশমায় সুস্থ করে তুলছে, তখন ফরীদি টিভিতে ঘোষণা করে শান্তকে ধরিয়ে দিতে। এর আগে ফরীদিকে একজন পুলিশ অফিসারকে খুন করতে দেখেছিল শাহনাজ, শান্তকে এটা জানানোর পর ফরীদি প্রথমবারের মতো আসে শান্তর সন্দেহে। তাছাড়া ভাইয়ের হত্যাকারী বের করতে শান্ত যে একটা বলপয়েন্ট কলমের ক্যাপের সন্ধান করছিল সেটা পাওয়া গিয়েছিল ফরীদির স্ত্রী অর্থাৎ তার মুত বোনের হাতে। তখন আগপাছ মিলিয়ে সে আবিষ্কার করে নেয় ঐ কাপটা ফরিদির কাছে। অতএব ঝাঁপিয়ে পড়ে ফরীদির বিরুদ্ধে, ফরীদিও ততোদিনের মুখোশ ছেড়ে হয়ে গেছে পুরোপুরি ভিলেন। নায়ক-ভিলেনের এই লড়াইয়ে ফরীদি হারতে বাধ্য। কিছু চূড়ান্ত প্রতিশোধের সুযোগটা শান্তকে না দিয়ে রাজ্জাক নিজেই শেষ তার দেন ফরীদিকে। এ জন্য তারও শেষ হওয়ার কথা কিন্তু মুমূর্ষু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে ঘোষণা করলেন, ফরীদিদের হত্যা করার জন্য। অতএব রাজ্জাক বেঁচে থাকলেন, মান্নাও শাহনাজের সঙ্গে লোকালযে, অরণ্যে নাচগান করার একটা পার্টিতে সুযোগ পেলো।

শাহনাজ ছবির নায়িকা। একের পর এক ছবিতে মূল নায়িকা হিসেবে সুযোগ পাচ্ছেন আর সমান হারে স্বাস্থ্য বাড়ছে। ক্ষুধা, দারিদ্য, রুগ্নতার এই দেশে তার এমন বর্ধনশীল শরীরের উৎস কী? তার খাওয়ার মেনু জানতে ইচ্ছে করে বড়ো।

*বাংলা চলচ্চিত্র বিষয়ক একটি ফেসবুক গ্রুপে রিভিউয়ের পেপার কাটিং পোস্ট করেছেন কাব্য হোসাইন। রিভিউটি সেখান থেকে সংগ্রহ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *