• June 9, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

রজনীকান্ত এক ব্যর্থ প্রেমিকের আক্ষেপ

বাশা সিনেমা শুটের সময় এক রাতে – দেবান নামক এক অভিনেতাকে ডিনারের দাওয়াত দেন রজনীকান্ত। হয়ত রজনী সেদিন একাকী আর ইমোশনাল ছিলেন – কথায় কথায় রজনী তার জীবনের প্রথম প্রেমের গল্প দেবানকে শেয়ার করেন।

 

‘রজনীকান্ত তখনো ব্যাংগালোরের বাস কন্ডাকটর। বাসে কাজ করবার সাথেসাথে স্টেজে নাটক করতেন। সাধারণত সেই সময় বাসের পিছনের গেট থেকে যাত্রী উঠতো আর সামনের গেট থেকে নামতো। একদিন এক মেয়ে সামনের গেট থেকেই হুরোহুরি করে উঠছিলো। এই নিয়ে রজনী ও তার ভিতরে তর্কাতর্কি হয়। কথা-কাটাকাটির পরও সেই মেয়ে সামনের দরজা দিয়েই বাসে উঠেছিলো। মেয়েটির নাম ছিলো নির্মলা – MBBS স্টুডেন্ট।

যদিও শুরুটা তর্কের মাধ্যমে ; ধীরে ধীরে তাদের ভিতর বন্ধুত্ব হয়। একসময় সেই বন্ধুত্ব আরো গাড় হয়। একদিন রজনী নির্মলাকে তার নাটক দেখতে আমন্ত্রণ জানালেন। নির্মলা সেই নাটকটি দেখতেও গিয়েছিলেন। কিছুদিন পর হঠাৎ রজনী ‘Adayar Film Institute’ থেকে এডমিশন লেটার পান। কিন্ত রজনী তো এপ্লাই করেননি তবে কিভাবে?
কিছুদিন পর সে বুঝলো নিম্মি (নির্মলাকে রজনী ভালবেসে ডাকতেন) এই এপ্লিকেশন তার হয়ে পাঠিয়েছিলো।

রজনীকান্ত নিম্মিকে জিজ্ঞাসা করেছিলো কেন সে এপলিকেশন পাঠালো। নিম্মি জবাব দিয়েছিলো – ‘তুমি ভালো অভিনয় করো। আমার মনে হয় তুমি অনেক স্পেশাল। আমি তোমাকে সিনেমার পোস্টারে দেখতে চাই, তোমার অনেক বড় বড় কাট আউট থিয়েটারের সামনে দেখতে চাই। সারা ভারতে তোমার নাম হয় এমন তারকা হিসাবে তোমায় দেখতে চাই। তুমি যখন স্টেজে পারফর্ম করছিলে আমি আমার কল্পনায় এসব দেখেছি। আর এজন্য আমি তোমার হয়ে এপ্লিকেশন করেছি ; তোমার অবশ্যই যেতে হবে।”

এক মেডিক্যাল ছাত্রীর সাথে মধ্যবিত্ত ঘরের স্ট্রাগলার বাস কন্ডাক্টরের অসম ভালবাসা ..!
তার উপর এমন মন্তব্য একটা এমন জীবন যুদ্ধে লড়ে চলা পুরুষের জীবনে কত বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে তা হয়ত বুঝানো সম্ভব না। কিন্ত শুধু অনুপ্রেরণায় তো পেট চলেনা। চেন্নাইয়ে যেয়ে এক্টিং কোর্স করতে টাকার দরকার, তার উপর চাকুরী ছাড়তে হবে – গরীব রজনীর সে সামার্থ্য কোথায়। তবুও নিম্মি হার মানবার পাত্রী ছিলেন না। তার জোরাজুরি চলতেই থাকলো।

একদিন বেশ কিছু টাকা রজনীর পকেটে দিয়ে, রজনীকে চেন্নাই যেয়ে অভিনয়ের কোর্সটা করতে যেতে বলেন। তিনি আরো কথা দেন,, খরচ যা লাগে তিনি দেবেন তবুও যেন রজনী কোর্সটা শেষ করে। রজনীকান্ত ইতস্তত বোধ করলো, তবুও প্রেমিকার জেদের কাছে হার মানতে হলো। বাস কন্ডাক্টরের চাকুরী ছেড়ে নিম্মির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চেন্নাইয়ে নিজের এক্টিং কোর্স করতে চলে গেলেন রজনী।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস চেন্নাইয়ে যেয়ে মাসখানেক পর নিম্মির চিঠি আসা বন্ধ হয়ে গেল। যোগাযোগ আর হলোনা। কোর্স শেষ করে রজনী ফিরে এলেন – সারা ব্যাংগালোরে খোজ করেও তার নিম্মির দেখা পেলেননা। তার বাসায় গিয়েও দেখেন বাসা তালাবদ্ধ। প্রতিবেশীরা জানালো নিম্মিরা স্বপরিবারে বাসা ছেড়ে চলে গেছে।

এসব বলতে বলতে রজনী দেবানকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলেন – আর বলেন “আজ আমি ওর স্বপ্ন পূরন করেছি ; আজ আমি অনেক বড় এক্টর কিন্ত ও একবারো আমার খোজ নিতে, এক পলক দেখতে এলো না…! আমি দুনিয়ার যেখানেই যাই – আমেরিকা হোক বা হিমালয় আমি আজো শুধু ওকে খুঁজে ফিরি। ভিড়ের মাঝে বারবার চোখ বুলাই – হয়ত কোনো ভিড়ের মাঝে আমার নিম্মি আমাকে দেখতে আসবে। কিন্ত পাইনা…!!
দেবান,,, আমি এতকিছু অর্জন করবার পরও ও কেন আমাকে একবারো দেখতে এলোনা বলতে পারো..!!??
.
.
১৯৯৪ এর বাশা সিনেমার শুটিংয়ে রজনী এই গল্প দেবানকে বলেছিলো। তখন তার বয়স ছিলো ৪৪ বছর। তখন Latha Rangachari এর সাথে তার বিয়ের ১৩ বছর চলে, ইতিমধ্যে দুই মেয়ের বাবা। এমন না পারিবারিক জীবনে তিনি অসুখী ছিলেন। লতাকেও ভালবেসেই বিয়ে করেছিলেন – সেও এক কলেজ স্টুডেন্ট ফ্যানগার্ল ছিলো। জীবনে কিছু নায়িকার সাথে সম্পর্কের কানাঘুষোও যে রজনীর নেই এমন না।

কিন্ত ওই যে – ‘প্রথম ভালবাসা, প্রথম প্রেম’ সেটা কে ভোলা যায়?? সারা দুনিয়ায় কোটি ভক্তের ভালবাসা পেলেন ; কিন্ত নিজের মনের মানুষকে রজনী হারিয়ে ফেললেন।

এটাই জীবন, তবুও মানুষ বাচে, লড়ে, বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যায়। কিন্ত তবুও মনের মধ্যেখানে একটা ক্ষত থেকেই যায়। আজ ২০২৩ এ এসে – রজনীর ৭৩ বছর বয়স। আজও হয়ত প্রায়ই তিনি তার প্রথম ভালবাসাকে খুজে ফেরেন।

জীবনে সব প্রাপ্তির মাঝে বড় এক অপ্রাপ্তি তাকে আজো তাড়া করে বেড়ায়..!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *