• May 18, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

পর্দা উপস্থিতি কত শক্তিশালী হতে পারে মান্না ছাড়া বোঝানো অসম্ভব!

‘স্বাধীনতা দিবস! বিজয় দিবস! এইডা দিয়া কি আম‌গো পেট ভরব?’ এটা মান্না অ‌ভিনীত ‘রু‌টি’ সিনেমার সংলাপ।

হলে গিয়ে মান্নার সিনেমা দেখা আমার জন্য একেবারেই অন্য রকমের এক অভিজ্ঞতা ছিল। যে বয়সে হলে গিয়ে লুকিয়ে বাংলা সিনেমা দেখাটা রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে ছিল, সেই বয়সে মান্নার সিনেমা হলে দেখেছি কয়েকবার। প্রতিবার সিনেমা শেষে আমার মনে হতো, পয়সা উশুল।

একটা মানুষের স্ক্রিন প্রেজেন্স কতটা শক্তিশালী হতে পারে, সেটা যিনি হলে বসে মান্নার সিনেমা না দেখেছেন তাকে বোঝানো প্রায় অসম্ভব। মান্নার ডায়লগ মানেই তালি, চিৎকার আর সিটি। বলা বাহুল্য, এসব বেশিরভাগ ডায়লগ কাজী হায়াতের সিনেমার।

রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী যেসব সিনেমা মান্না করেছেন, যেসব সিনেমায় মন্ত্রী-মিনিস্টাররূপী মিজু আহমেদ কিংবা মিশা সওদাগরের বুকে মান্না যেভাবে লাথি মেরেছেন আর সেসব সিনেমা সেন্সর হয়েও বেরিয়ে গেছে— এখন তা কল্পনাই করা যায় না। দাঙ্গা সিনেমায় মান্না যখন কাজী নজরুল ইসলামের ভাস্কর্যের দিকে হাত তুলে বলেন-

‘কবি! আরেকবার বিদ্রোহ করতে পারো না?

আরেকটা কবিতা লিখতে পারো না?

যে কবিতা শুনে জেগে উঠবে ১১ কোটি বাংলাদেশি,

গলা টিপে হত্যা করবে এদেশের ভণ্ড রাজনীতিবিদদের?’

এই দৃশ্য মনে পড়লে এখনও আমার গুজবাম্প হয়। ঐ ডায়লগ ডেলিভারি আর কাউকে দিয়ে হবে বলে মনে হয় না আমার।

২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জাওয়ান’ সিনেমায় নাগরিকদের ভোট প্রদান প্রসঙ্গে শাহরুখ খানের আড়াই মিনিটের স্পিচ থেকে আমরা বেশিরভাগ বিমোহিত হয়ে যাই। কিন্তু আমি জানি, এর চেয়েও অনেক শক্তিশালী সংলাপ মান্না-কাজী হায়াতের জুটির সিনেমায় আরও অনেক আগেই প্রদর্শিত হয়েছে।

কমার্শিয়াল সিনেমার অন্যান্য উপাদান প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি থাকার কারণে কিংবা মেকিং এতটা আহামরি না হওয়ার কারণে হয়তো সেসব সিনেমা নিয়ে আলাপ হয় না বা আলাপ করতে গেলে অনেকেই শংকিত থাকেন যে এফডিসির ‘সস্তা’ সিনেমাকে এপ্রিসিয়েট করে ফেললাম কীনা, তবে সেসব সিনেমার অনেস্ট ইনটেনশন নিয়ে কোন প্রশ্ন আসবে বলে মনে হয় না। জাস্ট দেখানোর জন্য কিংবা নিজেকে একটু আলাদা ডিরেক্টর হিসেবে প্রমাণ করার জন্য একটা বা দুইটা দৃশ্যে জোর করে পলিটিক্যাল অ্যাঙ্গেল ঢুকানো হতো না; আক্ষরিক অর্থেই রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী সিনেমা ছিল সেগুলো। অনীল কাপুরের নায়ক সিনেমার অনুকরণে ‘মিনিস্টার’ সিনেমাতেও কাজ করেছিলেন মান্না।

২০০৮ সালে আজকের দিনে মান্নার চলে যাওয়ার পর থেকে ঐ ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্যধর্মী বাংলা সিনেমার নির্মাণও সম্ভবত বন্ধ হয়ে যায়। মান্নাকে মিস করার সঙ্গে সঙ্গে মান্নার সেইসব সিনেমা, সেইসব সিনেমা দেখে অডিয়েন্সের চিৎকার আর তালিকেও ভীষণ মিস করি আমি। গণমানুষের কথা পর্দায় বলতেন দেখেই সম্ভবত মান্নার মৃত্যুর পরে শহীদ মিনারে গণমানুষের এত বিশাল ঢল নেমেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *