• June 13, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

বলিউডের পর্দা কাঁপানো গ্যাংস্টাররা

ByDidarul Islam Himel

Jan 2, 2024

ভারতীয় উপমহাদেশে গ্যাংস্টারদের দৌরাত্ম্যটা কিন্তু আজ নতুন নয়। একটু ছোট পরিসরে যদি বলা যায়, বলিউডের সাথে গ্যাংস্টার জগতের সম্পর্ক সবচেয়ে আলোচিত ও লোভনীয়। সঞ্জয় দত্ত, সালমান খান, রাম গোপাল ভার্মা, অর্জুন রামপাল, প্রীতি জিনতা, অনিল কাপুর সহ আরো অনেকের সাথেই শোনা গেছে অন্ধকার জগতের যোগসাজশের গুজব; সত্যতাও মিলেছে অনেকবার। যেই জগতের সাথে সিনেমা জগতের এত প্রেম, তার নিবেদনে কোন ছবি হবেনা, ভাবাই যায় না। ‘গডফাদার’ বা ‘নার্কোস’ ঘরানার সিরিজ/সিনেমা যাদের প্রিয়, তারা তো বটেই, বলিউডি মশলাদার ছবির দর্শকরাও এখন ফিরছেন এইসব অন্ধকার জগত নিয়ে নির্মিত ছবিগুলোর দিকে। এরকমই কয়েকটি সিনেমাটি নিয়ে কথা বলবো আজ…

শ্যুটআউট এট লোখান্ডওয়ালা (২০০৭)

১৯৯১ সালে ভারতের লোখান্ডওয়ালা কমপ্লেক্সে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা অবলম্বনে পরিচালক অপূর্ব লাখিয়া নির্মাণ করেন ‘শ্যুটআউট এট লোখান্ডওয়ালা’(২০০৭)। মাফিয়া দাউদ ইব্রাহিমের সাবেক সহযোগী ছিল মায়া ডোলাস। ‍মায়া ডোলাস সম্পর্কে আরো জানতে এ লেখাটি একঝলক পড়ে নিন – মায়া ডোলাস : লোখন্ডওয়ালা শ্যুটআউটের খলনায়ক !

মায়া ডোলাসের দলের সাথে মুম্বাই পুলিশের শ্যুটিং এনকাউন্টারের পূর্ণ চিত্র উঠে এসেছে এই সিনেমায়। এতে মায়া চরিত্রে দেখা গেছে বিবেক ওবেরয় -কে, মায়ার মায়ের চরিত্রে ছিলেন অমৃতা সিং, এছাড়াও পুলিশ কমিশনার শমশের খানের চরিত্রে সঞ্জয় দত্ত এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছেন কিংবদন্তি অভিনেতা তুষার কাপুর, সুনীল শেঠি, দিয়া মির্জা রোহিত রয়, অমিতাভ বচ্চন ও আরবাজ খান। বক্স অফিসের পাশাপাশি সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে এই ছবিটি।

গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর

বলিউডে গ্যাংস্টার ছবি মানেই রাম গোপাল ভার্মা। উনার পর গ্যাংস্টার ঘরানায় সবচেয়ে সফল নির্মাতাটি হলেন অনুরাগ কাশ্যাপ। রাম গোপাল ভার্মার সাথে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা, ও বলিউডে নিজস্ব ধারা তৈরির ইচ্ছা, দুইয়ে মিলিয়ে অনেকটাই এগিয়ে অনুরাগ। সব ধরণের দর্শকদের কথা মাথায় রেখেই ২০১২ সালে তিনি ২ ভাগে নির্ম‍াণ করেন ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর ১ এবং ২’ , যা কিনা পুরো বলিউডের মাথাই ঘুরিয়ে দেয়। ভণিতাহীন একেবারে রগরগে চিত্রায়নে কয়লা মাফিয়াদের জীবন, রাজ্যপাট চালনা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পূর্ণ গল্প মুহূর্তেই লুফে নেয় দর্শক ও সমালোচকেরা।

মনোজ বাজপাই, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, রাজকুমার রাও, হুমা কুরেশি, রিচা চাড্ডা, রিমা সেন, পংকজ ত্রিপাঠি, পিযুশ মিশরা, জিসান কাদরি – একেবারে সুঅভিনেতাদের দিয়ে অনুরাগ সাজিয়েছেন তাঁর এই দুই পর্বের ট্র্যাজেডিনামা। জিসান কাদরির সাথে হাত মিলিয়ে ঝাড়খণ্ডের ওয়াসিপুর এলাকার মাফিয়া দ্বন্দ্বের সত্য ঘটনা পর্দায় এনেছেন অনুরাগ। তবে ছবির ব্যতিক্রমী দিক ছিলো তারকাদের স্টাইল এবং রং মিশালি চিত্রায়ন। সাথে ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক এবং ফোক গানের মিশ্রণও পোক্ত করেছে ছবিটিকে। সেরা অভিনেতা, সেরা অডিওগ্রাফির জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি দেশে বিদেশে নানান পুরস্কার জেতে অনুরাগের এই নির্মাণ।

সত্য (১৯৯৮)

মুম্বাই তথা গোটা আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে মোটামুটি পিএইচডি করে ফেলা রাম গোপাল ভার্মার গ্যাংস্টার ট্রিলজির প্রথম ছবি ‘সত্য’ (Satya 1998)। জোরদার গল্প, নিখুঁত অভিনয় এবং ভার্মার পরিচালনার কারুকাজে ছবির প্রত্যেক ফ্রেমেই নতুন কিছু না কিছু আবিষ্কার করেছে দর্শক। ভাগ্য বদলের আশায় মুম্বাই শহরে আসা এক যুবক সত্যকে নিয়েই আগায় সিনেমার গল্প। ক্রমশই অপরাধ জগত ও তার ঘাত প্রতিঘাতের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে সে।

নাম চরিত্রে সাউথের জে ডি চক্রবর্তী অনন্য অভিনয় করলেও ভিকু মাহাত্রে চরিত্রে মনোজ বাজপেয়ী কেড়ে নেন লাইমলাইট। যার ফলে সেবার সহঅভিনেতার জাতীয় পুরস্কার ও ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেতার (সমালোচক) পুরস্কার আসে তাঁর শেল্ফে। ফিল্মফেয়ারে সমালোচকদের চোখে সেরার পুরস্কারও পায় বলিউডের এই ক্লাসিক গ্যাংস্টার মুভি। অল্প সময় স্ক্রিনে থাকলেও পরেশ রাওয়ালের চরিত্রও ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ২ কোটির বিনিয়োগে ২০ কোটি রুপি ঘরে তোলে সৌরভ শুকলা–অনুরাগ কাশ্যপের কাহিনীতে নির্মিত এই মাস্টারপিস।

কোম্পানী (২০০২)

বলিউডি গ্যাংস্টার ঘরানাকে নিজ হাতে গড়ে পিটে তৈরি করেছেন রাম গোপাল ভার্মা – একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। তাঁর ট্রিলজির দ্বিতীয় সিনেমা ‘কোম্পানী’। এই সিনেমায় মুম্বাই অপরাধজগতের ধারা – উপধারা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে এর ব্যবহারের গল্প উঠে এসেছে সেলুলয়েডের ফিতায়। মোহনলাল, অজয় দেবগন, বিবেক ওবেরয়, অন্তরা মালি, মনীষা কৈরালা প্রমুখ অভিনীত এই ছবি মাত্র ৭০ মিলিয়ন বাজেটে নির্মিত হলেও আয় করে ২৫০ মিলিয়ন রুপি।

মাফিয়া দাউদ ইব্রাহিমের এককালের সহকারী হানিফের বয়ান থেকেই মূলত এই ছবির অনুপ্রেরণা পান রাম গোপাল। মানিক চরিত্রে অজয়ের চাইতে মনোজ বাজপাইকেই পছন্দ ছিল তাঁর। কিন্তু অজয় যে নিরাশ করেননি, উল্টো পর্দায় ভিন্নমাত্রা যোগ করে দিয়েছেন, পরে ঠিকই সেটা স্বীকার করেছেন পরিচালক। ফিল্মেফেয়ারেও ৬টি পুরস্কার পায় এই ছবি। আশা ভোসলের কণ্ঠে ‘খাল্লাস’ গানটির কথা অনেকেই ভুলতে পারবেন না, বিশেষত নাইটক্লাবে গানের দৃশ্যায়ন এবং ইশা কোপিকারের তীব্র নাটকীয় এক্সপ্রেশন ছিল ছবির অন্যতম আকর্ষণ।

ভার্মার গ্যাংস্টার ট্রিলজির তৃতীয় মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ডি’ (২০০৫); যা এই ঘরানায় আরেক মাইলফলক স্থাপন করে।

ড্যাডি (২০১৭)

বলিউডে গ্যাংস্টার ছবির মধ্যে বায়োপিক খুব কমই। ২০১৭ সালে সাবেক গ্যাংস্টার এবং এমএলএ অরুণ গৌলির উত্থান এবং পরিণতি নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘ড্যাডি’ চলচ্চিত্রটি। ছবিতে অরুণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্জুন রামপাল, দাউদ ইব্রাহিমের অনুরূপ চরিত্র মাক্সুদ ভাই হিসেবে দেখা গেছে ফারহান আক্তারকে।

সত্তরে ভারতের টেক্সটাইল মিলগুলোর আকস্মিক ছাটাই, সেই থেকে অরুণের অপরাধে অভ্যস্ততা, বাইকালা কোম্পানির উত্থান, দাউদ ইব্রাহিমের ডি কোম্পানির সাথে প্রথমে সখ্যতা এবং পরবর্তীতে সংঘাতের চিত্রের পাশাপাশি অরুণের রাজনৈতিক জীবনও উঠে এসেছে রূপালি পর্দায়।

অসীম আহলুওয়ালিয়া পরিচালিত ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসা পেলেও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।সম্ভবত রাজনৈতিক সমালোচনা এবং অপেক্ষাকৃত কম প্রচারণাই ছবির এহেন পরিণতির জন্য দায়ী। তবে অর্জুনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আলোচিত হয় বেশ।

বলিউডের সাথে অন্ধকার জগতের আঁতাত আছে সে বেশ নিঃসন্দেহেই বলা যায়। টি-সিরিজের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রযোজক গুলশান কুমারের হত্যাকাণ্ড সহ অনেক ঘটনাতেই জড়িত এই আন্ডারওয়ার্ল্ড। তাই বারবার বলিউডের পর্দায় উঠে এসেছে এই জগতের কড়চা। ‘বাস্তব’, ‘অগ্নিপথ’, ‘শ্যুটআউট এট ওয়াডালা’, ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই’, ‘আব তাক ছাপ্পান’, ‘ডন’, ‘মকবুল’, ‘সাহেব বিবি অউর গ্যাংস্টার’ প্রভৃতিই এর উদাহরণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *