• June 16, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

বাংলাদেশের সমালোচিত পাঁচ শীর্ষ অশ্লীল সিনেমা

ByDidarul Islam Himel

Jan 2, 2024

নব্বই দশকের শেষের দিকে বাংলা সিনেমা তার সোনালী সময় পেরিয়ে এক অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে। গোটা বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ড্রাস্ট্রিটাই তখন অশ্লীলতা নির্ভর হয়ে পড়ে। ‍দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এই অশ্লীলতা থেকে গা বাঁচাতে পারেনি বাংলাদেশের অনেক লিজেন্ড তারকারাও। বলতে খারাপ লাগলেও এই তালিকায় হুমায়ুন ফরিদী, মান্না, রুবেল, শাকিব খান, ডিপজল, মৌসুমী’র মত তারকাদের নাম চলে আসে। এমনকি পশ্চিম বাংলার ঋতুপর্ণাকেও এনে অশ্লীল সিনেমা তৈরি করা হয়েছে। প্রায় এক হাজারেরও বেশি অশ্লীল সিনেমা তৈরি করা হয়েছিল।

বাংলাদেশি অশ্লীল সিনেমা নিয়ে বিশেষ এ লেখায় আমি এখন কোনো রেন্ডম অশ্লীল সিনেমা নিয়ে কথা বলবোনা। আমি শুধু ৫টি সিনেমার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করবো। এই সিনেমাগুলো যেমন ব্যবসায়িক ভাবে সফল ছিলো, ঠিক তেমনি এতে অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় সব লিজেন্ড অভিনেতারা। তাই নানান কারণে এই সিনেমাগুলো অন্যান্য সব অশ্লীল সিনেমার তুলনায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত কিংবা সমালোচিত…

বাংলাদেশের শীর্ষ ৫ অশ্লীল সিনেমা

১. রাঙা বউ : ২ ঘন্টা ২০ মিনিটের এই সিনেমার প্রতিটা পারদে পারদে অশ্লীলতা আর যৌন উত্তেজক দৃশ্যে ঠাসা। কুড়ি মিনিট পরপরই শয্যা দৃশ্য ! বলা হয়ে থাকে, “রাঙা বউ” চলচ্চিত্র দিয়েই ঢালিউডে সর্বপ্রথম খুল্লাম খুল্লা অশ্লীল চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়। মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত “রাঙা বউ” সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালের ৩০শে অক্টোবর।

পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন পশ্চিম বঙ্গের তখনকার উঠতি নায়িকা ঋতুপর্ণকে ঢাকায় সিনেমায় আমদানি করেই অশ্লীলতার প্রথম ধাপ শুরু করেন। তার সাথে হাত ধরাধরি করে বাংলাদেশের শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। “রাঙা বউ” সিনেমাটা নারীকেন্দ্রিক হলেও সিনেমার প্রধান আকর্ষণ হুমায়ুন ফরিদী। ঋতুপর্ণার সাথে সমানতালে হুমায়ুন ফরিদীও অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয় করে গেছেন। “রাঙা বউ” সিনেমার সঙ্গীত আয়োজনে ছিলো সদ্য প্রয়াত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ! এই সিনেমাটির গানগুলোর কথা অশ্লীল এবং যৌন ইঙ্গিতমূলক।

তবে এটা স্বীকার করতেই হয়, বাংলা সিনেমায় অশ্লীলতার শুরুতে অন্যদের মত হুমায়ুন ফরিদী সমানভাবেই দায়ী !

২. হীরা চুনি পান্না : মালেক আফসারী পরিচালিত “হীরা চুনি পান্না” মুক্তি পায় ২০০০ সালের ১৭ই মার্চ। এই সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক ডিপজলের ডায়ালগ। পুরো সিনেমাটিই অশ্রাব্য গালিগালাজে ভরপুর। সাথে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি এবং কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য৷

সিনেমার প্রত্যেকটি নারী চরিত্র অর্ধনগ্ন পোশাকে। সিনেমার দৃশ্যগুলো এতটাই রগরগে ভাবে সাজানো যে, সিনেমার নায়িকাদের যৌন নির্যাতনের দৃশ্যগুলো দর্শকদের ব্যথিত না করে যৌন উত্তেজিত করে তোলে। বলতে গেলে, এ সিনেমার প্রত্যেকটা গানই নায়িকাদের শরীর নির্ভর। ক্যামেরার ক্লোজ শটে নায়িকাদের দেহের প্রত্যেকটা বাক দেখানো হয়েছে।

“আহো ভাতিজা আহো” কিংবা “পাট ক্ষেতে যাবি? আয় আমার লগে পাট ক্ষেতে চল” – এ ধরণের বা এরচেয়েও অশ্লীল ডায়ালগে সিনেমাটি ভরপুর। এতে অভিনয় করেছেন রাজিব, শাকিব খান, আমিন খান, ময়ূরী প্রমুখ। এদের কেউই অশ্লীল দৃশ্য থেকে মুক্ত না।

৩. ফায়ার : আবারও পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন। সিনেমার নাম “ফায়ার”। বলা হয়ে থাকে বাংলা ফায়ার সিনেমাটি সফট পর্নের চেয়েও বেশি কিছু। ছবিটি ২০০৩ সালে মুক্তি পায়। ‘ফায়ার’ সিনেমা দিয়েই নায়িকা পলির ঢালিউডে আগমন ঘটে।

ঢালিউডে অশ্লীলতা বিরোধী আন্দোলনের প্রথমসারিতে থাকা মান্না ফায়ার সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। সিনেমার গান, নায়িকার স্নান দৃশ্য এবং ধর্ষনের দৃশ্যগুলো ছিলো খোলামেলা যৌনতায় ভরপুর। এমনকি সেসময় কাটপিসের মাধ্যমে অনেক পর্নোগ্রাফির দৃশ্য সিনেমার মাঝে ব্যবহার করে বিভিন্ন সিনেমা হলে প্রদর্শন করা হয়। ব্যবসায়িক দিক থেকে ‘ফায়ার’” সিনেমাটি ছিলো সুপার হিট !

৪. কঠিন শাস্তি : শাহাদাৎ হোসেন লিটনের “কঠিন শাস্তি” মুক্তি পায় ২০০১ সালে। রুবেল, শিমলা, শাকিব খান, তামান্না ও ডিপজলের এই সিনেমাটাও অশ্লীলতার দোষে দ‍ূষ্ট। নায়িকার স্নানের দৃশ্য এই সিনেমায় অশ্লীলতার এক নতুন মাত্রা আনে। নায়িকার স্নানের দৃশ্য রুবেলকেও যোগ দিতে দেখা যায়।

সিনেমার প্রত্যেকটা গানে নায়িকাকে অর্ধনগ্ন কিংবা তারচেয়েও বেশিকিছু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। যার সাথে শাকিব-তামান্না, রুবেল-সিমলা সমানভাবে জড়িত।

আর বরাবরের মত অশ্লীলতায় সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন ডিপজল। সিনেমার প্রথম থেকে একদম শেষ দৃশ্য পর্যন্ত ডিপজল কোনো না কোনোভাবে যৌন উত্তেজক দৃশ্যের সাথে যুক্ত থাকার চেষ্টায় ছিলেন। সিনেমাটি দেখে এমনটাই মনে হয়। পরবর্তীতে সিনেমা হলে প্রদর্শিত হওয়ার সময় অনেক কাটপিস জুড়ে দেওয়া হয়।

৫. মহিলা হোস্টেল : স্বপন চৌধুরী পরিচালিত অশ্লীল সিনেমা ‘মহিলা হোস্টেল’। এতে অভিনয় করেছেন আলেকজেন্ডার বো, মুনমুন, ঝুমকা, মেহেদী এর মত অশ্লীলতার জন্য সমালোচিত অভিনয় শিল্পীরা। আরও আছেন মিজু আহমেদ। ২০০৪ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়।

সিনেমার কাহিনী আবর্তিত হয় একটি মহিলা হোস্টেলকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের এই সিনেমাটিতেই বোধহয় পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি ছিলো। সিনেমায় নারী চরিত্রগুলোকে নানান ঘটনার মধ্যে নিয়ে নানান রকমভাবে অর্ধনগ্ন করে উপস্থাপন করা হয়। সিনেমাটি একের পর এক অশ্লীলতাপূর্ণ বিকৃত রুচির গানে পরিপূর্ণ।

পরিশেষে…

ইউটিউব ঘেটে উল্লেখিত এই অশ্লীল সিনেমাগুলো দেখতে গেলেও এখন আর সবগুলো অশ্লীল দৃশ্য খুঁজে পাবেন না। দেখে এখন আর মনেই হবেনা যে এগুলো কোনো অশ্লীল সিনেমা। ঘষামাজা করে ‍দৃশ্যগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ‌ইমেজ রক্ষার চেষ্টায় সফলও হয়েছেন অনেকে। কিন্তু দিনশেষে এই সফল মুখগুলোকে নিয়ে বাংলা চলচ্চিত্র কতটা সফল, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *