• June 28, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

পঙ্গপাল বৃত্তান্ত : সিনেমার পর্দা থেকে বাস্তবে

ByDidarul Islam Himel

Jan 14, 2024

কথায় আছে, ফোটায় ফোটায় মহাসাগর। কথাটার সাথে যেনো পঙ্গপালের বেশ মিল এক দুই করে ঝাঁক ঝাঁক দলবদ্ধ খাদক। বর্তমানে পঙ্গপাল নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বেশ চর্চা হচ্ছে। কিন্তু পঙ্গপাল আসলে কী? বিভিন্ন সিনেমায় দেখানো হচ্ছে, পঙ্গপাল মানবসৃষ্ট ঘাসফড়িং। প্রতিপক্ষ দেশের শস্য উৎপাদন থামিয়ে দিয়ে শত্রুপক্ষ গবেষণাগারে এ পোকাগুলো বানিয়েছেন। সত্যিই কী তাই? নাকি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে আগমণ ঘাসফড়িং প্রজাতির এ পোকাগুলোর?

কী এই পঙ্গপাল?

প্রাণীবিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে পঙ্গপাল হল অ্যাক্রিডিডে (Acrididae) পরিবারে ছোট শিংয়ের বিশেষ প্রজাতি এর বৈজ্ঞানিক নাম লোকাস্টা মাইগ্রেটিয়া। যাকে চেনার সুবিদার্থে ঘাসফড়িং বলা যেতে পারে। তবে ঘাস ফড়িং এর সাথে এদের মূল পার্থক্য হল দলবদ্ধ হয়ে থাকার স্বভাব। দল বা ঝাকে থাকা এর জীবনচক্রের একটি অংশ। জীবনচক্রের এই সময়টিকে গ্রেগোরিয়াস ফেজ বা দলবদ্ধ পর্যায় বলা হয়। স্বভাবে কিছুটা লাজুক প্রকৃতির এই পতঙ্গ দৈর্ঘ্যে সাধারণত ১ ইঞ্চি হয়। ঘাসফড়িংগুলো যখন দলবেঁধে চলাফেরা করে তখন এদের ‘পঙ্গপাল’ বলে। জীবনকালের কিছু সময় এরা অন্যান্য পতঙ্গের মতই আলাদা থাকে। পঙ্গপালের একেক ঝাঁকে কয়েক লাখ থেকে কয়েক কোটি পতঙ্গ থাকতে পারে।

একা থাকা অবস্থায় এই ঘাস ফড়িংগুলো কৃষির জন্য বিরাট কোন আর্থিক ক্ষতি করে না। তবে অনাবৃষ্টির পর দ্রুত ফসলের বর্ধন হলে এদের মস্তিষ্কে থাকা serotonin তাদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তনের সূত্রপাত করে। ফলে তারা প্রচুর পরিমানে ও দ্রুত জন্মদান শুরু করে। তখন তারা একত্রে থাকে। এতে থাকে পাখাবিহীন ছোট পঙ্গপাল যেটা পরে পাখা জন্মে দলে যোগ দেয়। এই পাখাবিহীন এবং পাখনাসহ পঙ্গপালের দল একসাথে চলাচল করে এবং দ্রুত ফসলের মাঠের ক্ষতি করে। পূর্নবয়স্ক পঙ্গপাল শক্তিশালী তারা অনেক দূর পর্যন্ত উড়তে পারে আর পথে যেখানেই থামে সেখান থেকে ফসল খেয়ে শক্তি অর্জন করে। ঘাসফড়িং থেকে পঙ্গপালে রূপান্তরিত হওয়ার সময় এদের শরীর সবুজাভ বর্ণ থেকে কিছুটা হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং তার মধ্যে কালো দাগ দেখা যায়। এসময় দ্রুত শারীরিক বর্ধন ঘটে এবং তারা সাধারণ ফড়িংয়ের তুলনায় আকারে বড় হয়।

ধর্মগ্রন্থে পঙ্গপাল

পঙ্গপালের এই মরক তৈরি করার ইতিহাস বহু পুরনো। পুরনো মিশরীয়রা তাদের কবরে এদের একেছিল। ইলিয়ড, বাইবেল এবং কোরআন ইত্যাদি গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে। পঙ্গপালের দল ফসল ধ্বংস করে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছে যার ফলে মানুষ প্রচরণশীল হয়েছে। গ্রিসের ইলিয়াডে এই পতঙ্গের কথা উল্লেখ রয়েছে। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে এই পতঙ্গকে ঈশ্বরের শাস্তিস্বরূপ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করা রয়েছে।

ধর্মগ্রন্থ ও বিজ্ঞান থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করা বুঝা যায়, পঙ্গপাল মানবসৃষ্ট দুর্যোগ নয়। বরং এটি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই এসেছে…

কতটা ভয়াবহ এই পঙ্গপাল

পঙ্গপালের ১০ লাখ পতঙ্গের একটি ঝাঁক একদিনে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলতে পারে। পঙ্গপালের ঝাকের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অতিতে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হওয়ার নজিরও দেখা গিয়েছে। আফ্রিকার মরু পঙ্গপালের ঝাকের আকার অকল্পনীয় বড় হতে পারে।

আক্রমণ ঠেকাতে মানুষ নানা পদক্ষেপ নিলেও সেগুলো খুব ভালো কাজে দেয়নি। তবে পঙ্গপালের বিস্তার রোধে এগুলো দলবদ্ধ হওয়ার পূর্বেই প্রতিরোধ করে ভালো ফল পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও পঙ্গপালের আক্রমণ রোধে বিমান থেকে কীটনাশক স্প্রে করারও নজির রয়েছে। পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণে বাতাসে বা মাটিতে কীটনাশক ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।

পঙ্গপাল সম্পর্কে কিছু বিস্ময়কর তথ্য

  • পঙ্গপালের একটি ঝাঁকে ৪০ থেকে ৮০ মিলিয়ন ফড়িং থাকতে পারে।
  • এরা মোট ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
  • শস্য/খাবার শেষ হয়ে গেলে পঙ্গপালরা নিজেরাই নিজেদের খেয়ে একটি ঝাঁক ধ্বংস করে ফেলে।
  • পঙ্গপালের চোয়াল করাতের আঁকাবাঁকা ধাঁরালো অংশের মত। শস্য খাওয়ার সময় এটি মুখের একপাশ থেকে আরেকপাশে দ্রুত গড়াতে থাকে।
  • পঙ্গপালদের দেহ জলরোধী বা ওয়াটারপ্রুফ। এ কারণেই কোনো স্প্রে জাতীয় তরল বিষ দিয়ে এদের মারা যায় না।
  • পঙ্গপালের দেহে চামড়ার স্তর তিনটি। উপরের দুটি শক্ত খোসার ভেতর আরেকটি নরম আবরণ রয়েছে।
  • পঙ্গপাল প্রজাতির ফড়িং রান্না করে খেলে হার্টের ক্যান্সার দুর হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *