দ্য আউটসাইডার ফরাসি লেখক ও দার্শনিক আলবার্ট কামুসের একটি বিখ্যাত ফিলোসফিক্যাল উপন্যাস। আকারে ছোট হওয়ায় এই উপন্যাসটিকে নোবেলা অর্থাৎ ছোট উপন্যাস বলা হয়। আলবার্ট কামুসের এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ফরাসি ভাষায় L’Étranger নামে। পরবর্তীতে ইংরেজিতে অনুবাদ হলে মার্কিন ইংরেজি অনুবাদে উপন্যাসের নামকরণ করা হয় The Stranger নামে আর ব্রিটিশ ইংরেজিতে নাম করা হয় The Outsider নামে।
আলবার্ট কামুসের এই উপন্যাসটিকে ফিলোসফিক্যাল উপন্যাস বলার কারণ হচ্ছে তিনি এই উপন্যাসে এক্সিটিয়ালিজম বা অস্তিত্ববাদ, অ্যাবসার্টিজম ও নিহিলিজমের মত দার্শনিক তত্ত্বের ব্যবহার ঘটিয়েছেন। যেগুলোর সার্বিক অর্থ হচ্ছে মানুষের জীবন ও অস্তিত্ব সবকিছুই অর্থহীন।

আলবার্ট কামুস উপন্যাসের সময়কাল হিসেবে বেছে নিয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ের অর্থাৎ ১৯৩০ এর দশকের আলজেরিয়াকে। আলজেরিয়া তখন ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মারসো। একই সাথে তিনি এই উপন্যাসের ন্যারেটর অর্থাৎ বর্ণনাকারী। মারসো আলজেরিয়ার একটি অফিসে কেরানির কাজ করেন। তার অফিসের বস তাকে প্যারিসে বদলি করার সুযোগ দিলেও তা সে গ্রহণ করেনি। এই প্রস্তাব গ্রহণ করলে তার চাকরির দ্রুত উন্নতি ঘটতো। তার চাকরির প্রতি আগ্রহের অভাবই বোঝায় যে তিনি সমাজের প্রচলিত “উন্নতি” ধারণাকে বিশেষ গুরুত্ব দেন না।
উপন্যাসের শুরু হয় মারসোর মায়ের মৃত্যু দিয়ে। উপন্যাসের শুরুতে মার্সো তার মায়ের মৃত্যুকে বর্ণনা করেন এভাবে যে, “Maman died today. Or maybe yesterday, I don’t know.” মারসোর মা মামান আজ কিংবা গতকাল মারা গেছে সে ব্যাপারে তার কোন ধারনা নেই। মায়ের মৃত্যুতে তাকে কষ্ট বা শোকাহত হতে দেখা যায় না।
বিশ্বাসের দিক থেকে মারসো একজন নাস্তিক। মানুষ জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুবরণ এসব তার কাছে খুবই সাধারণ বিষয়। তার চরিত্রের মধ্যে সংবেদনশীলতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। কোন ঘটনাকেই সে ভালো বা মন্দ বলে বিচার করে না, তিনি কেবল শুধু পর্যবেক্ষণ করেন।
মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে সে তার অফিস থেকে দুই দিনের ছুটি নিয়ে বাসে করে মায়ের বৃদ্ধাশ্রম মারেঙ্গেতে যান। বাসে চলার পুরোটা সময় তিনি ঘুমিয়ে কাটান। মায়ের মৃত্যুতে তাকে কোনো শোক, দুঃখ বা অনুতাপ করতে দেখা যায় না।
বৃদ্ধাশ্রম এর পরিচালক তাকে তার মায়ের মুখ শেষবারের মতো দেখতে চাই কিনা জানতে চাইলে মারসো দেখতে চায় না বলে জবাব দেয়। নিয়ম অনুযায়ী মৃত লাশের সাথে তার আত্মীয়কে একরাত কাটাতে হয়। মারসো সেই বৃদ্ধাশ্রমের কেয়ারটেকারের সাথে করে পুরো রাত লাশের পাশেই কাটান কফি আর সিগারেট পান করে। এরপরের দিন সকালেই মারসোর মায়ের শেষকৃত্যের আয়োজন করা হয়। সেই শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের সময় বৃদ্ধাশ্রম এর থমাস প্যারেজ নামের এক বয়স্ক ভদ্রলোক উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছিলেন এই বৃদ্ধাশ্রমে মারসোর মায়ের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মানুষ।
এই উপন্যাসে আলো একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। আলোর সাথে সাথে মার্সোর সাইকোলজিক্যাল পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। মারসো যে রাতে তার মায়ের মৃতদেহের পাশে কাটিয়েছিলেন সেই ঘরটি ছিলো প্রচণ্ড উজ্জ্বল। কারণ জানালার পাশে থাকা বাতিগুলো জ্বলছিল।আলো ও গরমের জন্য মোঁরসো ক্লান্ত ও অস্বস্তিকর বোধ করে। গভীর রাতে তার চোখ তন্দ্রায় ভারী হয়ে আসলেও সে ঘুমাতে পারেনি আলোর জন্য।
পরেরদিন যখন তার মায়ের অন্তেষ্টিক্রিয়ার কাজ শুরু হয় তখন মারসো বারবার সূর্যের তীব্রতার কারণে তার বিরক্তির কথা উল্লেখ করেন। সূর্যের আলোর তীব্রতায় তার কপাল ঘামে ভিজে যায়, চোখ জ্বলতে থাকে, এবং মাথাব্যথা শুরু হয়।সে বারবার বলে, এই গরম তার কাছে অসহনীয় লাগছে।এই সূর্য ও গরম শুধু একটি আবহাওয়া নয়, বরং মোঁরসোর মানসিক অবস্থার প্রতিচিত্র। মারসো শোক বা আবেগের বদলে সে শারীরিক অস্বস্তি নিয়ে বেশি সচেতন।