টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা SDGs হল জাতিসংঘের একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যা ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই লক্ষ্যমাত্রাগুলির মূল লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীকে একটি আরও ভালো, সমৃদ্ধ এবং টেকসই জায়গায় রূপান্তরিত করা।
বাংলাদেশও এই যাত্রায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং নানা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে অগ্রসর হচ্ছে।
এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব কিভাবে বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলি অর্জনের পথে যাত্রা করছে।
দারিদ্র্য নিরসন
বাংলাদেশ দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
“সকল রকম দারিদ্র্যের অবসান” এই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রথম লক্ষ্য। বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রাম এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
ক্ষুধা মুক্তি
দ্বিতীয় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা হলো “ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং উন্নত পুষ্টি।
” বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
সরকারের বিভিন্ন কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প এবং প্রযুক্তির প্রয়োগের ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ক্ষুধা নিরসনে অগ্রগতি হয়েছে।
স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ
বাংলাদেশ “স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ” নিশ্চিতকরণে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।
মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার কমেছে।
টিকাদান কর্মসূচি, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের বৃদ্ধির ফলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষার প্রসার
“সমতার ভিত্তিতে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ” এই লক্ষ্যেও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ভর্তির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, মেয়েদের শিক্ষার হার বেড়েছে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জেন্ডার সমতা
জেন্ডার সমতা অর্জনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু হয়েছে।
নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব প্রদানে সরকারের উদ্যোগ কার্যকর হয়েছে।
সুশীল সমাজ এবং উন্নয়ন
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলির মধ্যে অন্যতম হলো “শান্তি, ন্যায়বিচার এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান” প্রতিষ্ঠা করা।
বাংলাদেশ সুশাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
দুর্নীতি নিরসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের প্রচেষ্টা ইতিবাচক ফলাফল দিয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষা
বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
“জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা” এবং “জল এবং স্থলজ জীববৈচিত্র্য রক্ষা” টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলির অংশ।
বনায়ন প্রকল্প, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষায় অগ্রগতি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলি অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করে এই লক্ষ্যমাত্রাগুলি অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।
বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব প্রশংসিত হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ
যদিও বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, তবুও চ্যালেঞ্জগুলি রয়ে গেছে।
দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্যসেবা, এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও উন্নতি প্রয়োজন।
তবে, সরকারের পরিকল্পনা এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলি অর্জনের পথে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে।
সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ, জনগণের অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ, টেকসই এবং সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলি শুধু আমাদের উন্নয়নের পথে নয়, বরং একটি উন্নত বিশ্ব গড়ার পথে আমাদের দিশা দেখাচ্ছে।