কোরিয়ান সিনেমা বা কে-সিনেমা বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতে বিশাল পরিবর্তনের সূচনা করেছে। ২০১৯ সালে “প্যারাসাইট” এর অস্কার জয় দিয়ে শুরু হওয়া এই যাত্রা কেবল শুরু নয়, বরং কোরিয়ান সিনেমার দীর্ঘদিনের সংগ্রাম এবং সাফল্যের প্রতিফলন। এই নিবন্ধে আমরা কোরিয়ান চলচ্চিত্রের সাফল্য, গুরুত্বপূর্ণ হিট চলচ্চিত্র, পরিচালকদের অবদান এবং কোরিয়ান সিনেমা বা কে-সিনেমার বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।
প্রাথমিক দিন এবং সংগ্রাম
কোরিয়ান চলচ্চিত্র শিল্পের সূচনা হয়েছিল ১৯১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “উইরিয়েজেজিব্যালাম” (The Righteous Revenge) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তবে, ১৯৫০-এর কোরিয়ান যুদ্ধের পর থেকে এটি নতুন জীবন পায় এবং ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৯৬০-এর দশকে কোরিয়ান সিনেমার প্রথম স্বর্ণযুগ শুরু হয়, যেখানে একটি ধারা প্রকাশ পায় এবং স্থানীয় পরিচালকরা তাদের প্রতিভা প্রমাণ করেন।
আধুনিক যুগের সফল পরিচালক ও চলচ্চিত্র
কোরিয়ান সিনেমার আধুনিক যুগে বহু প্রতিভাবান পরিচালক তাদের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বং জুন-হো, যিনি “প্যারাসাইট” চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন। এছাড়াও “মেমোরিজ অফ মার্ডার,” “ওকজা,” এবং “দ্য হোস্ট” এর মতো চলচ্চিত্রের জন্যও তিনি পরিচিত।
পাক চ্যান-উক আরও একজন মহৎ পরিচালক, যিনি “ওল্ডবয়,” “লেডি ভেনজেন্স” এবং “থার্স্ট” এর মতো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দর্শকদের মন কেড়েছেন। তার চলচ্চিত্রগুলি প্রায়শই জটিল এবং গভীর মানসিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করে।
কিম কি-দুক একজন প্রভাবশালী কোরিয়ান পরিচালক, যিনি “স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার… অ্যান্ড স্প্রিং,” “৩-আয়রন,” এবং “পিয়েতা” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচিত। তার কাজগুলি প্রায়শই ধ্যান এবং আধ্যাত্মিকতা নিয়ে আলোচনা করে।
গুরুত্বপূর্ণ হিট চলচ্চিত্র

কে-সিনেমার অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র রয়েছে যা বিশ্বব্যাপী দর্শকদের মন কেড়েছে। ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “ওল্ডবয়” শুধু কোরিয়াতেই নয়, বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর ব্যতিক্রমী কাহিনী এবং শক্তিশালী পারফরম্যান্স এর জন্য এটি এখনও আলোচনার বিষয়।
২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “ট্রেন টু বুসান” একটি অ্যাকশন-হরর চলচ্চিত্র, যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। এই চলচ্চিত্রটি তার তীব্র গল্প এবং চমকপ্রদ দৃশ্যের জন্য প্রশংসিত হয়।
“প্যারাসাইট,” যা ২০১৯ সালে মুক্তি পায়, কোরিয়ান সিনেমার ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এটি প্রথম কোরিয়ান চলচ্চিত্র যা অস্কারে সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছিল এবং এটি সামাজিক বৈষম্য ও নৈতিকতার প্রশ্নগুলিকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে।
কে-সিনেমার বৈশ্বিক প্রভাব
কে-সিনেমার বৈশ্বিক প্রভাব ব্যাপক এবং বিস্তৃত। কোরিয়ান চলচ্চিত্রগুলি তাদের নিখুঁত গল্প, উচ্চমানের নির্মাণশৈলী এবং অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে। এছাড়াও, এই চলচ্চিত্রগুলি কোরিয়ান সংস্কৃতি ও সমাজকে বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে পরিচিত করেছে।
কোরিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবগুলিও বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলেছে, যেমন বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (BIFF), যা এশিয়ার অন্যতম প্রধান চলচ্চিত্র উৎসব হিসেবে বিবেচিত হয়। এই উৎসব কোরিয়ান এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে, যেখানে তারা তাদের সৃষ্টিকর্ম প্রদর্শন করতে পারে।
কোরিয়ান সিনেমার উত্থান এবং বিশ্বব্যাপী প্রভাব প্রমাণ করে যে, এটি শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং সাংস্কৃতিক দূতাবাস হিসেবেও কাজ করে। “প্যারাসাইট” এর পরেও কোরিয়ান চলচ্চিত্র শিল্প তার সৃজনশীলতা এবং প্রতিভার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দর্শকদের মন জয় করে চলেছে। কোরিয়ান চলচ্চিত্রগুলি আমাদের দেখিয়ে দেয় কিভাবে একটি ছোট চলচ্চিত্র শিল্পও বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলে এবং অন্য সবার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।