• June 9, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

হৃদয় আর্দ্র করা ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’

ByDidarul Islam Himel

Apr 1, 2024

সস্তা-বস্তাপচা গল্প, অভিনয়ে ন্যাকামি-আনাড়িপনা, খাপছাড়া সংলাপ, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার, কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি, আর দুর্বল চিত্রনাট্যের কারণে প্রেম-বিরহ নির্ভর সিনেমা-নাটক দেখা ছেড়ে দিয়েছি বহু বছর। অনেকদিন পর জাহান সুলতানার গল্পে পরিচালক শিহাব শাহীনের সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত রোমান্টিক জনরার ওয়েব ফিল্ম ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’ দেখলাম। বলা যায়, অনেক বছর পর প্রেম-বিরহ ও রোমান্টিক জনরার দুর্দান্ত একটা চলচ্চিত্র হয়েছে বাংলাদেশে। শক্তিশালী গল্প, চমৎকার ও সাবলীল সংলাপ, দক্ষ চিত্রনাট্য। সবমিলিয়ে এককথায় অনবদ্য।

তাসনিয়া ফারিণ আর প্রীতম হাসানের অভিনয় আকাশচুম্বী প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। মুগ্ধতাপূর্ণ অভিনয় করেছে ফারিণ। আমার দেখায় মেয়েটির এ যাবতকালের সবচেয়ে ভালো অভিনয় এটাই। প্রীতম হাসানের ন্যাচারাল লুক আর এক্সপ্রেশন ডেলিভারি একেবারেই রিয়্যালিস্টক ছিল।

ফারহান অনাথ, বড় হয়েছে অনাথাশ্রমে। নিজের চেষ্টায় রুয়েট পর্যন্ত এসেছে। জীবনে আসা প্রথম প্রেম, স্কলারশিপে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া, সেখানে পার্ট টাইম জব, পড়াশোনা প্রতিটি জায়গায় ছেলেটি নিজেকে গল্পের প্লটে এমনভাবে ঢুকিয়ে নিয়েছে অভিনয় নাকি বাস্তবতা আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এখানেই প্রীতম সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে।

লোকেশন-কাস্টিংও ছিল চমৎকার। রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহীর একটি নদীর তীর আর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে শুট করা হয়েছে ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’। সিনেমাটোগ্রাফি ভালো হয়েছে। অল্প কয়েকটি চরিত্র দিয়ে সাজানো গল্প। রূপন্তী আকিদ, সমাপ্তি মাশুক, খলিলুর রহমান কাদেরী, শিরিন আলম, শুভজিৎ ভৌমিক ও শাহীন শাহনেওয়াজ; প্রত্যেকে যার যার জায়গায় ভালো অভিনয় করেছে।

‘লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ নেভার ওয়ার্ক’ তত্ত্বে গল্পে দুরত্বের কারণে শারমিন আর ফারহানের সম্পর্ক টক্সিক হয়ে ওঠার অংশটিতে খানিকটা খেই হারাচ্ছে হারাচ্ছে করছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাগাম ধরে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন পরিচালক। ‘আ হার্টফুল হাগ মেন্ডস আ ব্রোকেন রিলেশনশিপ’! একটা উষ্ণ আলিঙ্গন সম্পর্কের মধ্যকার ছোটখাটো শূন্যস্থানগুলো পূর্ণ করে তুলতে পারে। ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’য় সবচেয়ে শক্তিশালী মেসেজ আমি বলবো এটাই। এটা এক আলিঙ্গনের গল্প। মাঝেমাঝে নীরবতার হাজারো সরব মুহূর্ত থেকেও মুখর হয়ে ওঠে। নীরবতার ভাষা যে কতটা শক্তিশালী হতে পারে গল্পের শেষে ফারহান আর শারমিনের কয়েক মিনিটের নীরবতায় দুজনের হৃদয়ের রুদ্ধ আগল খুলে হু হু করে ঢুকে পড়া বিরহ বাতাসে পাথর গলার দৃশ্য সেটা আরেকবার প্রমাণ করেছে।

শারমিন আর ফারহানের সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছিল। দুজন মানুষ একেবারেই চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। একটা সময় ফারহান উপলব্ধি করে ইগো আর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান মানুষটিকে একসাথে ধরে রাখা যাবে না। একটিকে আগলে রাখতে হলে অন্যটি বিসর্জন দিতে হবে। শেষতক শেষ দেখার বেঁধে দেয়া সময়টুকুও যখন শেষ হয়ে যায়, তখন ফারহানের কিঞ্চিৎ জোর করে শারমিনকে জড়িয়ে ধরার মাধ্যমে উভয়ের মেকি ইগো ভেঙে খানখান হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দর্শকের হৃদয়কে আর্দ্র করবে। চোখ সিক্ত করবে। আর এমনভাবে হৃদয়ে দাগ কেটে যাবে, বহুদিন পর্যন্ত অদ্ভুত এক ভালো লাগায় এই দাগ যত্ন করে পুষতে ইচ্ছে করবে। এবং বারবার একান্তে কল্পনা করতে ইচ্ছে করবে। গল্পের শেষদৃশ্যে চিত্রনাট্যকার যে দুর্দান্ত এক দৃশ্য চিত্রায়িত করেছে, নিঃসংকোচে বলা যায়— এটা বাংলা কনটেন্টের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সেরা ক্লাইম্যাক্স দৃশ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *