• June 9, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

ইলিয়াস কাঞ্চন-মৌসুমী জুটির রসায়ন

ইলিয়াস কাঞ্চনমৌসুমী জুটি নব্বই দশকে মানসম্মত একটি জুটি ছিল। এ জুটিকে পর্দায় দেখে বোঝা যেত বোঝাপড়াটা ছিল শক্তপোক্ত। এ জুটির সিনেমাগুলোর মধ্যে ভাংচুর, আত্মত্যাগ, অন্ধ ভালোবাসা, স্বজন, সুখের ঘরে দুখের আগুন, আদরের সন্তান, ভণ্ড প্রেমিক, শেষ রক্ষা, মনে রেখো পৃথিবী, রক্তের অধিকার উল্লেখযোগ্য।

এ জুটির প্রথম ছবি ‘শেষ রক্ষা।’ কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন মৌসুমীর কাছে প্রস্তাব নিয়ে যায় ছবিটির। মৌসুমী রাজি হয়। ছবির গল্পটি জাহানারার পছন্দে হয়েছে। এ ছবিতে কাঞ্চন-মৌসুমী জুটি দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল যার ফলে পরে আরো ছবি হতে থাকে।

‘আদরের সন্তান’ ছবিটি বড় পরিসরে শিক্ষণীয়। ভুলের কারণে মানুষের জীবন বদলে যেতে পারে বা উপকার করতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে যাবার মতো পরিস্থিতি আসলে জীবনের গতিপথ পাল্টায়। সংসারে সন্তানের প্রতি মা-বাবার চাওয়া কাঞ্চনের মা-বাবা ডলি জহুর-আবুল হায়াত এবং মৌসুমীর বাবা এটিএম শামসুজ্জামান দুদিক থেকেই প্রযোজ্য। কাঞ্চন তার সৎ জীবনযাপনে মৌসুমীকে হাইজ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে যায়। তার এ খবর পত্রিকায় এলে বাবা আবুল হায়াত আত্মহত্যা করে। মা ডলি জহুর কাঞ্চনের মুখ দেখা বন্ধ করে। কাঞ্চন মৌসুমীর ওপর প্রতিশোধ নিতে আসে। মৌসুমী ভুল বুঝতে পেরে কাঞ্চনকে ভালোবাসে এবং তার পারিবারিক সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। এভাবেই দুজনের রসায়ন দানা বাঁধে পরিস্থিতির ওপরে।

‘স্বজন’ ছবিতে এ জুটির রসায়ন নতুন করে বলার কিছু নেই। কবিসাগরের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া মৌসুমী পুরো ছবিতে গ্ল্যামারাস। ছবির গানগুলো অনবদ্য। পারফেক্ট রিমেক ছিল ছবিটি।

‘আত্মত্যাগ’ মিউজিক্যাল ছবি। ছবির সব গান কালজয়ী। এর মধ্যে কাঞ্চন-মৌসুমীর ‘এ জীবন তোমাকে দিলাম বন্ধু’ এটা ক্লাসিক। গানের দৃশ্যায়ন, অভিনয় অসাধারণ।

‘সুখের ঘরে দুখের আগুন’ ছবিতে মৌসুমী থাকে স্যাক্রিফাইসিং রোলে। কাঞ্চনের সাথে প্রেম হয়। অন্যদিকে দিতি হয়ে ওঠে আরেক পার্ট। তাদের দুজনের প্রেম হওয়ার সিকোয়েন্সটি খুবই রোমান্টিক ছিল। বৃষ্টির রাতে কাঞ্চন ফোনে মৌসুমীকে বলে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। মৌসুমী তখনই গাড়ি নিয়ে চলে যায় কাঞ্চনের বাসার সামনে। তখনই হয় কালজয়ী গানটি-‘যে জীবনে তুমি ছিলে না, সে জীবন জীবন তো নয়।’

‘অন্ধ ভালোবাসা’ ফ্যামিলি ড্রামা। কাঞ্চন-মৌসুমীর প্রেম, বিয়ে, মৌসুমীর উপর কাঞ্চনের বাবা মিজু আহমেদের নির্যাতন এসবের মধ্য দিয়ে মৌসুমীর মা-বাবার খোঁজ মেলে। উপভোগ্য ছবি ছিল। ‘ভাংচুর’ ছবিতে এ জুটি ‘সবার জীবনে প্রেম আসে’ গানটির জন্যই কালজয়ী হয়ে থাকবে।

‘ভণ্ড প্রেমিক’ ছবিতে মৌসুমীর মন পেতে কাঞ্চনের সব ভণ্ডামি উপভোগ্য ছিল। এটিএম শামসুজ্জামানকে এজন্য জ্বালিয়ে মারে কাঞ্চন। রসায়ন জমে ওঠে মৌসুমীর কাছে ভণ্ডামি ধরা পড়ার আগে ও পরে দুদিক থেকেই। ‘মনে রেখো পৃথিবী’ ছবিতে মৌসুমীকে কাঞ্চনের প্রেম নিবেদনের সিকোয়েন্সটি অত্যন্ত রোমান্টিক ছিল।

এ জুটির জনপ্রিয় গানগুলো: সবার জীবনে প্রেম আসে – ভাংচুর; এ জীবন তোমাকে দিলাম বন্ধু – আত্মত্যাগ; সময় হয়েছে ফিরে যাওয়ার – আদরের সন্তান; অনেক ভালোবেসে হয়েছি তোমার, আমার মন এত পাগল যে – স্বজন; যে জীবনে তুমি ছিলে না – সুখের ঘরে দুখের আগুন; আমার জীবন তুমি – অন্ধ ভালোবাসা; আমার হবে সেই বউ, তোমার আমার কোনো সম্পর্ক নাই – শেষ রক্ষা; তুমি সুখে থাকো ও নন্দিনী – ভণ্ড প্রেমিক।

কাঞ্চন-মৌসুমী জুটির আরো ছবি হতে পারত। ফিল্ম পলিটিক্সের জন্য সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *