• June 9, 2025

Chalachchitra

Explore the magic of Bengali cinema and culture

অনিল বাগচীর একদিন

ByDidarul Islam Himel

Jan 12, 2024

…“এই সৌন্দর্যের ছবি আকা সম্ভব নয়। সৌন্দর্যের একটি অংশ আছে যার ছবি আকা যায় না”…

সবাই ভয় পায়। কেউ কম, কেউ বেশি। একা থাকলে সাধারণত ভয়ের পরিমাণ বেরে যায়। অনিল বাগচী শুধু বেশি না, অনেক বেশি ভয় পায়। এত বেশি ভয় যে রাতের বেলা তার অডিও ভিজুয়াল হেলুসিনেশন হয়। ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি সময়ে অনিলের জীবনে ঘটে যাওয়া কোন একদিন কে নিয়েই –
অনিল বাগচীর একদিন
জনরাঃ ড্রামা, মুক্তিযুদ্ধ
পরিচালনাঃ মোরশেদুল ইসলাম
কাহিনীঃ হুমায়ুন আহমেদ
অভিনয়ঃ আরেফ সৈয়দ, গাজী রাকায়েত
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৮/১০

কাহিনী সংক্ষেপঃ
১৯৭১ সাল। ছোটবেলা থেকে ভীতু স্বভাবের অনিল ঢাকায় একটি মেসে থাকে। কাজ করে ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে। তার স্কুল শিক্ষক বাবা আর একমাত্র বড়বোন অতসী থাকে রুপেশ্বর গ্রামে। একদিন ভোরে রুপেশ্বর হাই স্কুলের হেডস্যারের একটি চিঠি পায় অনিল। চিঠি থেকে জানতে পারে তার বাবাকে মিলিটারিরা মেরে ফেলেছে। বোন আশ্রয় নিয়েছে হেডস্যারের বাসায়। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসে করে রওনা দেয় রুপেশ্বর গ্রামের দিকে।

রঙ্গিন এবং সাদা-কালো। এই দুই ভাগে বিভক্ত ছবির ঘটনাকাল। ফ্লাশব্যাকগুলো রঙ্গিন। বর্তমান হল সাদা-কালো। আমরা সাধারণত উল্টোটা দেখতে পাই। ফ্যাশব্যাকের সবগল্পই মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগের ঘটনা। যুদ্ধকালীন সময় আর আগের সময়ের পার্থক্য দেখানোর জন্য হয়তো বা এমন উল্টো রঙের ব্যবহার। বিদেশী সাংবাদিকের কাছে দেয়া অনিলের সাক্ষাতকার শুনে তাই মনে হল “… রাস্তায় কি কোন শিশু আছে? … শহরে কিছু সুন্দর সুন্দর পার্ক আছে… গিয়ে দেখেছেন কেউ কি পার্কে আছে?” সময় চলছে, মৃত সময়। (আমার ধারনা ভুল হতে পারে)
অনিল বাগচীর একদিন সিনেমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক এর সিনেমাটোগ্রাফী। হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসে জ্যোৎস্না সবসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর আগে কোথাও এত সুন্দরভাবে জ্যোৎস্না রাতকে চিত্রায়ন করতে দেখিনি। শুরুর দিকে জ্যোতসা রাতের পুকুর পারের দৃশ্য আর শেষপর্যায়ে নদীর পারের দৃশ্য মনে রাখার মতই। এছাড়াও অনিলের ভয় পাবার দৃশ্য, ভোরবেলা কোরআন তিলাওয়াত, মেঘলা আকাশের নিচে বাস থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা, গ্রামের বাড়ির ভেতরের দৃশ্যগুলো ভালো হয়েছে। আর শেষ দৃশ্যে যখন অনিল চোখ বন্ধ করে… চোখে লেগে থাকার মত।

অভিনয়ের কথা বললে অনিল চরিত্রে অভিষিক্ত আরেফ সৈয়দ এবং আইয়ূব আলী চরিত্রে গাজী রাকায়েত, দুই চরিত্রের কথাই বলতে হবে। আরেফ সৈয়দের ডায়ালগ কম থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এক্সপ্রেশনই ছিল একমাত্র ভরসা। কম-বেশি শতভাগ পার্ফেক্ট হয়েছে। আর গাজী রাকায়েত – স্বভাবতই বস। বাকি অভিনেতা অভিনেত্রীরা মোটামুটি কাজ করেছেন।

সংগীত পরিচালনায় সানী জুবায়ের দেখে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে কিছু নতুন ট্র্যাক পাবো মনে করেছিলাম। সিনেমায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তেমন ছিলই না। দুটি/তিনটি গান আছে। তবে এন্ড ক্রেডিটে “আবার আসিব ফিরে”র আবৃত্তি একটি চমক ছিল।

৭১ এর ঢাকাকে দেখানোর জন্য মুড়ির টিন বাসের সাথে চা স্টলের দেয়ালে টানানো ‘টাকা আনা পাই’-এর পোস্টার – চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিলনা।

হ্যাঁ, কিছু কিছু জায়গা আরো ভালো হতে পারত। সেগুলো বাদ দিলে উপন্যাসের যথার্ত চিত্রায়ন এবং আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের সিনেমার সংগ্রহশালায় এক অনন্য সংযোজন।

২০০৬ এ খেলাঘর, ২০১১ এ আমার বন্ধু রাশেদ তারপর ২০১৫ এ অনিল বাগচীর একদিন– মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনটি সিনেমা এর মধ্যেই তৈরী করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। হুমায়ুন আহমেদের কাহিনী নিয়ে এটি মোরশেদুল ইসলামের তৃতীয় ছবি। এর আগে দূরত্ব (২০০৪) এবং প্রিয়তমেষু (২০০৯) তৈরী করেন। হুমায়ুন আহমেদের লেখা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সেরা উপন্যাসের মধ্যে চিত্রায়ন হতে একমাত্র “জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প” বাকি আছে।

কোন সাহসী পরিচালক বানাবেন “জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প” নিয়ে সিনেমা?

ট্রেইলারঃ https://www.youtube.com/watch?v=iJBvtWvwU0c

সকল ইনফোঃ BMDB, Wiki

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *